সম্পাদক সমীপেষু...
স্বাস্থ্য ব্যাপারটা আর একটু জটিল
লন্ডনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রাক্তন চিফ এক্সিকিউটিভ রুথ কারনেলের কথায় এটা পরিষ্কার যে, ব্রিটেনে এখনও জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে, বেশির ভাগ মানুষের চিকিৎসাই বিনা পয়সায় হয় ওই জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমেই। (‘বড় হাসপাতাল চাই না...’, স্বাতী ভট্টাচার্য, ৬-৬)
স্বাস্থ্য নিয়ে এ দেশে কোনও রাজনীতি যদি থেকে থাকে, তা তো রয়েছে ওখানেই। ১৯৪৬ সালেই ‘ভোর’ কমিটি (স্বাস্থ্য বিষয়ক এ যাবৎ কালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান ও যথার্থ সুপারিশ যে কমিটি করেছে) এ দেশে স্বাস্থ্য বিষয়ে যে সুপারিশগুলি করেছিল, কেন তা আজও কার্যকর করা হল না, বা যতটুকু করা হয়েছিল তাও বা কেন বিকেন্দ্রীকরণের নামে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়ে স্বাস্থ্যকে ব্যয়বহুল পণ্যে পরিণত করা হল? আর কোনও দলের নেতারাই বা কেন তার প্রতিবাদ করেন না?
‘ভোর’ কমিটি গাইডলাইন দিয়েছিল, স্বাস্থ্য পরিষেবার তিনটি স্তর থাকবে: প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি। এবং থাকবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাবলিক হেলথ সিস্টেম। যার উপর রুথ কারনেলও জোর দিয়েছেন। তো, এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে? সার্বিক ভাবে সাবসেন্টার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি হেলথ সেন্টারগুলি এখনও অত্যন্ত অপ্রতুল। (সারণি দ্রষ্টব্য)

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো: যা চাই, যা পেয়েছি
পরিকাঠামোর নাম থাকার কথা রয়েছে ঘাটতি
সাবসেন্টার ১২৪৪৩ ১০৩৫৬ ১৭ শতাংশ
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২০৭৪ ৯০৯ ৫৬ শতাংশ
কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ৫১৮ ৩৪৮ ৩৩ শতাংশ
স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ৬০ ৩৪ ৪৪ শতাংশ
জেলা স্তরে মোট বেড ২৪৭৩০ ৪২০৪ ৮৩ শতাংশ
এই পরিকাঠামোগত ঘাটতি পুরণে যথাযথ উদ্যোগ স্বাধীনতার পরে কোনও সরকারের কাছ থেকেই দেখা যায়নি। উল্টে বেসরকারি সংস্থাকে স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা করানোর সুযোগ কমবেশি সব সরকারই করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। আর স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের গলা ফাটাফাটি বেশি পরিমাণে চলছে বোধহয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কে কতটা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে পারে, তা নিয়ে।
জনস্বাস্থ্য ও জনচিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাতের জন্য ডা. সজল বিশ্বাসকে ধন্যবাদ। তবে দু’একটি কথা বলার আছে। গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ডাক্তারের সংখ্যার খামতি রয়েছে। পরিষেবার উন্নতি করতে আরও বেশি ডাক্তার পাঠানো প্রয়োজন, এই হল সজলবাবুর মত। তাঁর সঙ্গে সহমত অনেক চিকিৎসক, অধ্যাপক, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের অংশীদাররা। এঁদের মতামত ‘ল্যানসেট’ কাগজে একগুচ্ছ প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় ‘India: Towards Universal Health Coverage’ শিরোনামে। এঁরা আরও ভাল চিকিৎসা পরিষেবার জন্য আরও বেশি বরাদ্দ এবং আরও অনেক ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের পক্ষপাতী।
এই মতের বিপক্ষে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, জিষ্ণু দাশ-এর মতো অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা ভারত-সহ নানা দেশের গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবার চিত্র এবং জনস্বাস্থ্য চিত্র নিয়ে দীর্ঘ দিন সমীক্ষা করছেন। আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে তাঁদের উৎকর্ষ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তাঁদের সততা বা সদুদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
অভিজিৎবাবুর গবেষণা এটাই বলছে যে, গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সরকারি চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি এত বেশি (ভারতে গড় ৪২ শতাংশ), যে গরিব মানুষের কাছে সরকারি চিকিৎসার সুযোগ পৌঁছয় সামান্যই। জিষ্ণুবাবুর গবেষণা বলছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরকারি ডাক্তারদের চিকিৎসার মান অন্য ডাক্তারদের চাইতে উন্নত নয়। যেমন, কয়েকটি রোগ-লক্ষণ দেখলে যে প্রশ্নগুলি করা উচিত (সমীক্ষায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ওই ডাক্তাররা নিজেরাই সেগুলি বলেছেন), কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকারি ডাক্তাররা তার এক-তৃতীয়াংশ প্রশ্ন রোগীকে করছেন। বেসরকারি ডাক্তাররা করছেন ৬০ শতাংশ। যে ডাক্তারি পরীক্ষাগুলো তৎক্ষণাৎ করা দরকার, তার মাত্র কয়েকটি করছেন। তাই, যদি ধরেও নেওয়া যায় যে সরকারি ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ-দক্ষতা আরও ভাল, তা হলেও তার কতটা লাভ পাচ্ছেন রোগীরা, সে প্রশ্ন থেকে যায়। (জিষ্ণু দাশ এবং জেফ্রি এস হ্যামার-এর গবেষণাপত্র বিশ্বব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে)।
তা হলে কি এই গবেষকরা বলছেন, হাতুড়ে দিয়ে গ্রামের লোকের চিকিৎসা হোক? সে কথা বললে এঁদের প্রতি অন্যায় করা হবে, বিষয়টির প্রতিও অবিচার করা হবে। তাঁরা কেবল বলছেন, বেশি করে সরকারি ডাক্তার গ্রামের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠালেই গরিব রোগী আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাবে (ভোর কমিটি যেমন বলেছিল), এমন প্রমাণ বাস্তব থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথা বলার ফলে এই গবেষকরা চিকিৎসক সমাজ, রাজনৈতিক নেতা, এমনকী জনমতের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। যেমন নিয়েছেন রুথ কারনেল, কম চিকিৎসক দিয়ে, কম খরচে অধিক কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থার সূত্র বার করতে চেয়ে। লন্ডনের সঙ্গে কলকাতার স্বাস্থ্যচিত্রে, চিকিৎসা পরিকাঠামোয় অনেক পার্থক্য, কিন্তু চিকিৎসার রাজনীতিতে তাদের অবস্থান খুব কাছাকাছি। রোগীর জন্য যা সর্বাধিক কার্যকর, তা পাশ-করা ডাক্তারের জন্য সবচেয়ে লাভজনক না-ও হতে পারে, এটা মেনে নিয়ে বিতর্ক চালানো যাক।

অব্যবস্থা
বনগাঁ শাখার যাত্রীর সংখ্যা প্রচুর, দিন দিন সে সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ১২ বগি ট্রেনের দেখা পাওয়া যায় না সকাল-সন্ধের ব্যস্ত সময়ে। ফলে, প্রতিদিনের গুঁতোগুঁতি, ঝগড়া-ঝামেলা। আর, প্রায় রোজই দমদমে ঢোকার মুখে ট্রেনগুলি সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকে। এই লাইনে ট্রেনযাত্রা যাত্রীদের কাছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক।
রিকশায় ওঠানামা
শহরতলির রিকশার পাদানিগুলি বেশি উঁচু, ফলে ওঠানামা কষ্টকর, বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের পক্ষে। উত্তর ভারতে দেখা অটো রিকশার মতো নিচু রিকশার বডি তৈরি হোক বা ওঠানামার জন্য সুন্দর পাদানির ব্যবস্থা হোক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.