|
|
|
|
এসজেডিএ: বরাত প্রক্রিয়া, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন |
ক্যামেরার কী হাল, তদন্তে বিশেষজ্ঞ দল
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ করে শিলিগুড়িতে ‘ক্লোজড সার্কিট’ ক্যামেরা বসানোর বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং কাজের মান নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে তা নিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে। পাশাপাশি এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ নিজেরাও তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন। তদন্তের কাজ শেষ না হলেও গভীর রাতে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো ওই ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা ঠিক করছে বলে অভিযোগ। তদন্তের মধ্যে ঠিকাদার সংস্থাকে কী ভাবে ওই কাজ করার অনুমতি দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তদন্তের মাঝপথে ওই কাজ করা নিয়ে ঠিকাদার সংস্থা এবং এসজেডিএ’র পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে রহস্য দানা বাঁধছে। ঠিকাদার সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সুব্রত দত্ত বলেন, “কোনও কাজ করা হচ্ছে না। যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।” এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী বাস্তুকার শরদ দ্বিবেদী বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ উঠছে কেন বুঝতে পারছি না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।” ঘটনা হল, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন কিন্তু, সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “তদন্তের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা বসানোর সম্পর্ক নেই। আমরা শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে তা তাড়াতাড়ি বসানোর পক্ষে।”
তবে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, পুলিশের তরফে শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ক্যামেরা ব্যবহারের উপযুক্ত করে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সে কারণেই ওই কাজ করা হচ্ছে। দুই পক্ষের আলাদা বক্তব্যে কিছু রাখঢাক করা হচ্ছে বলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এসজেডিএ’র সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল বলেন, “আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে, যে রাত ১০টার পরে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এমন অভিযোগ উঠলে তা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দেখতে হবে। কাজ হচ্ছে কি না, হলেও কী কাজ হচ্ছে তা স্পষ্ট করা হোক।”
কাজের মান নিয়ে যেখানে প্রশ্ন তদন্তের মাঝপথে সেখানে এ ভাবে ঠিকাদার সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ায় তাদের ভুল শুধরে নিজেদের দোষ ঢাকার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন কয়েকটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত বাস্তুকার, ঠিকাদারদের আইনজীবীরা। একটি ঠিকাদার সংস্থাকে যদি ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়, তা হলে অন্যদের কেন সুযোগ দেওয়া হবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত এসজেডিএ’র বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের আইনজীবী পার্থ চৌধুরী এবং ঠিকাদার শঙ্কর পালের আইনজীবী অভ্রজ্যোতি দাস এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন।
পার্থবাবু বলেন, “এসজেডিএ নিজেরাই জানিয়েছেন নিকাশি প্রকল্প, শ্মশানে বৈদ্যুতিকচুল্লি, শহরে বসানো ক্যামেরা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে তারা তদন্ত করছেন। সেই তদন্ত রিপোর্ট না পেয়ে কেন সেই কাজগুলি করতে ঠিকাদারদের একাংশকে অনৈতিকভাবে সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ শুনছি। এটা গুরুতর ব্যাপার!” অভ্রজ্যোতিবাবুর অভিযোগ, “একটি সংস্থাকে যদি এ ভাবে তদন্তের মাঝপথে ভুল শুধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়, তা হলে অন্যান্য সংস্থাকেও সেই সুযোগ দেওয়া দরকার। শঙ্করবাবুকে যে প্রকল্পের কাজ নিয়ে অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে, সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। টাকা পুরো মেটানো হয়নি। কোথাও ভুল হলে তিনি শোধরানোর সুযোগ তা হলে পাবেন না কেন?”
এই মূহূর্তে এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। ওই ক্যামেরাগুলি শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে গত বছর পুজোর আগেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে তা হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও এসজেডিএ’র তরফে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা পুলিশকে হস্তান্তর যে করা হয়নি তা স্পষ্ট। রুদ্রবাবু বলেন, “এই মুহূর্তে আমার কিছু বলা ঠিক নয়। তদন্ত করানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এবং এসজেডিএ কর্তৃপক্ষই যা বলার বলবেন।”
|
|
|
|
|
|