পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থীদের সৌজন্যে প্রতীকের ছড়াছড়ি। স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির প্রতীকে ভোট ময়দানে নামতে পারেননি অনেকে। তারা নির্দল হিসেবে ভোটে লড়ছেন। তাঁদের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন বৈচিত্রপূর্ণ প্রতীকের ব্যবস্থা করেছে।
কমিশন জেলা পরিষদের প্রার্থীদের জন্য ১৬টি, পঞ্চায়েত সমিতির জন্য ২৬টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য ২৭টি প্রতীক নিদিষ্ট করে দিয়েছে। জেলা পরিষদের প্রতীকগুলির মধ্যে যেমন আছে মোটরগাড়ি, বাস, লম্ফ, স্কুলভবন, সিলিং ফ্যান, টেলিফোন, ট্রাক্টর, কম্পিউটার তেমনি প্রতীক হিসেবে রয়েছে বন্যপ্রাণী ও ক্রিকেটারও।
আবার পঞ্চায়েত সমিতিতে কমিশন নির্দলদের প্রতীক হিসেবে দিয়েছে ম্যাটাডোর থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল, অটো রিকশা, স্কুল বাস, বই, টেলিভিশন, কোদাল, ডাস্টবিন। এমনকী প্রতীক হিসেবে ক্রীড়াবিদ, চিকিৎসক, সাতারু, পোস্ট অফিসের কর্মী, মোবাইল ফোন, কলা, রেল ইঞ্জিন, কলা, নারকেলরও জায়গা করেছে।
তবে প্রতীক বৈচিত্রে পঞ্চায়েতের উপরের দু’টি স্তরকে ছাপিয়ে গিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। আম, কাঁঠালের মত রসালো ফলের পাশাপাশি সেলাই মেশিন, কুড়ুল, রেডিও, টেবিল ফ্যান, কলা গাছ, নারকেল গাছ, লাঙল, কালির দোয়াত, শিশুকন্যাও গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দলদের জন্য প্রতীক হিসেবে দিচ্ছে কমিশন। শৌচাগারের প্যানও কমিশন গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ করেছে। |
প্রার্থীদের কাছে সব প্রতীকই যে সমান কদর পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। প্রার্থীরা জানাচ্ছেন, ভোটারদের কাছে অত্যন্ত চেনা প্রতীকগুলিই তাঁদের প্রথম পছন্দ। টিকিট না পেয়ে শাসকদলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে নির্দল হয়ে লড়ছেন লালমোহন মল্লিক। এ নিয়ে ৬ বার পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। একবার কৃষ্ণগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও ছিলেন। মাস খানেক আগে পর্যন্ত তৃণমূলের হয়ে কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ছিলেন তিনি। লালমোহনবাবু এ বার ভোটে দাঁড়াচ্ছেন কুঁড়ি-সহ জোড়া পাতা চিহ্নে। কেন এমন প্রতীক বাছলেন? তাঁর সটান জবাব, “এটা মানুষের কাছে পরিচিত। তাই ভোটাররা সহজে মনে রাখতে পারবেন। এ ছাড়াও এই প্রতীক দেওয়ালে আঁকাও সহজ।”
ওই একই পঞ্চায়েত সমিতি থেকে আনন্দমোহন বিশ্বাস ‘মোটরবাইক’ প্রতীকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর কথায়, “এটা সকলের পরিচিত প্রতীক। তা ছাড়া ভোটারদের বোঝাতে চাইছি আমাকে জেতালে মোটরবাইকের মতো দ্রুত উন্নয়ন করব।” আবার শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নির্দল প্রার্থী মঞ্জু সরকার ‘সাইকেল ভ্যান’ চিহ্নে ভোটে লড়ছেন। তাঁর বক্তব্য, “এই চিহ্ন খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তা ছাড়া মনে রাখাও সহজ।” আবার ফুলিয়ার টাউনশিপ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য শিখা সরকার। তাঁর প্রতীক বটগাছ। শিখাদেবী বলেন, “এই প্রতীকের মাধ্যমে ভোটারদের বোঝাতে চেয়েছি আমাকে জেতালে বটবৃক্ষের মতো সকলকে আশ্রয় দেব।” কিন্তু একই কেন্দ্রে মুখোমুখি দুই নির্দল প্রার্থী একই প্রতীক দাবি করলে কী হবে? কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক সব্যসাচী সরকার বলেন, “সে ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে প্রতীক বণ্টন করা হবে।” |