ভোট শেষে প্রত্যয়ী সেনাপতি
ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং...
দু’হাতের দু’টো মোবাইলই ঘনঘন বেজে চলেছে। কখনও নন্দীগ্রাম থেকে ফোন, কখনও বা পটাশপুর থেকে। যে কোনও সমস্যাতেই নেতার পরামর্শ নিচ্ছেন কর্মী-সমর্থকেরা। কখনও তাঁর নির্দেশ, “অযথা বুথের সামনে জটলা হতে দিস না।” কখনও আবার চাপাস্বরে জানতে চাইছেন, “কী কোনও গোলমাল নেই তো?”
নিজের জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনটা কার্যত ফোনেই সামলালেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। বেশ কিছু এলাকা ঘুরলেন বটে। তবে কোথাও বুথে যাননি। পার্টি অফিসে গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেরে নিয়েছেন খুঁটিনাটি হিসেব। সে সব শেষে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’র মুখে চওড়া হাসি। বলছেন, “মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। বিরোধীরা হুমকি-সন্ত্রাসের যে সব অভিযোগ করছিল, তা যে ঠিক নয় এ দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই তার প্রমাণ।”

খোশমেজাজে শুভেন্দু অধিকারী
সকাল সওয়া ৭টাতেই কাঁথির ‘অধিকারী বাড়ি’ থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তারপর সারাদিন ঢাউস কালো গাড়িতে চেপে চসে বেড়িয়েছেন কাঁথির ৩টি ব্লক, চণ্ডীপুর, তমলুক, খেজুরি থেকে মহিষাদল, হলদিয়া। তবে নন্দীগ্রামে পা রাখেননি। বেলা ১২টা নাগাদ তমলুকের মানিকতলায় নিজের সাংসদ কার্যালয়ে খোশমেজাজেই পাওয়া গেল শুভেন্দুকে। জঙ্গলমহলের ভোট শান্তিতে মিটেছে। এ বার তো দ্বিতীয় দফা। কী বুঝছেন? “জঙ্গলমহলের তুলনায় আমাদের জেলার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান আলাদা। এখানে ভোটও অনেক বেশি পড়বে, প্রায় ৯০ শতাংশ” প্রত্যয়ী শোনাল শিশির-পুত্রকে। কিন্তু বিরোধীরা তো বলছে আপনারা একতরফা ভোট করাচ্ছেন, প্রার্থী পর্যন্ত দিতে দেননি! এ বার শুভেন্দুর কণ্ঠস্বর আরও দৃঢ়, “বিরোধীদের অভিযোগ তো জেলার মানুষই নস্যাৎ করে দিয়েছেন। সর্বত্র শান্তির ভোটই তার প্রমাণ।” বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না পারায় ব্যাখ্যাও দিলেন।
তমলুকের তৃণমূল সাংসদের মতে, “ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম যেখানে সব থেকে বেশি সন্ত্রাস করেছে, যেমন নন্দীগ্রাম, খেজুরি ভগবানপুর ২ ব্লক, সেখানেই প্রার্থী খুঁজে পায়নি। অন্যত্র তো বিরোধীদের ভালই প্রার্থী রয়েছে।” তবে সে সব যে নামেই প্রার্থী, লড়াইয়ে দর নয়, সে কথা শুভেন্দু ভালই জানেন। আর জানেন তাই দিনের শেষে তিনি নিশ্চিন্ত।

নিঃসঙ্গ নিরঞ্জন সিহি
দিনভর খোশমেজাজে ছিলেন জেলার মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও। সকাল ১০টাতেও পাঁশকুড়ার সুরানানকারে নিজের বাড়িতেই পাওয়া গেল তাঁকে। স্নান-টান সেরে জিমে ঢুকেছিলেন গা ঘামাতে। খানিক পরে বেরোলেন। প্রথমে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে দলীয় কার্যালয়, পরে দেলেন তমলুকে নিজের বিধায়ক কার্যালয়ে। শুভেন্দুর মতো সৌমেনবাবুও এ দিন কোনও বুথে যাননি। রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বললেন, “আমি নিজে পুর-এলাকার বাসিন্দা। নির্বাচনী বিধি মেনেই পঞ্চায়েত এলাকার কোনও বুথে যাইনি। তবে সারাক্ষণ ফোনে খবরাখবর নিয়েছি।” সৌমেনবাবুর বাড়ির এলাকা পাঁশকুড়ায় পঞ্চায়েত সমিতি ২০০৮ সালেও সালেও সিপিএমের হাতছাড়া হয়নি। তবে এ বার এই পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “আমার আশা মানুষ এ বার আমাদের সমর্থন করবেন।”

শরীরচর্চায় ব্যস্ত সৌমেন মহাপাত্র।
শাসকদলের সাংসদ-মন্ত্রী যতটাই নিশ্চিন্ত, ততটাই চাপে রয়েছেন বিরোধী সিপিএমের নেতা নিরঞ্জন সিহি। এক সময় জেলা পরিষদে সহ-সভাধিপতির দায়িত্ব সামলানো নিরঞ্জনবাবু এ বারও জেলা পরিষদ আসনেই প্রার্থী হয়েছেন। তবে যে আসন থেকে বরাবর জিততেন, সেই পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া থেকে এ বার তিনি ভোটে দাঁড়াতে পারেননি। মহিলা সংরক্ষণের গেরোয় নিরঞ্জনবাবুকে প্রার্থী হতে হয়েছে পাঁশকুড়ারই অপর প্রান্তে পুরুষোত্তমপুর-রঘুনাথপুর এলাকা থেকে। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ রাতুলিয়া হাইস্কুলে ভোট দেন নিরঞ্জনবাবু। তারপর সারাদিন ছিলেন তমলুক-পাঁশকুড়া রাস্তার ধারে পার্টি অফিস ‘লেনিন ভবনে’। মাঝে বেরিয়ে ফকিরগঞ্জ, হাঁড়িঝামা এলাকায় বুথেও যান। অন্যান্য বার ভোটের কী বুঝছেন জানতে চাইলে নিরঞ্জনবাবু বলতেন, “অবশ্যই জিতছি।” এ বার অবশ্য গলায় সংশয়। শুধু বললেন, “আশা করছি আমি নিজে জিতব।” বুথে বুথে ঘোরার সময় নিরঞ্জনবাবুর কাছে কাউকে আসতে দেখা গেল না। এমনকী দলের কর্মী-সমর্থকদেরও না। যাঁরা তাঁকে চেনেন না, তাঁদের পক্ষে সত্যিই বোঝা ভার ইনি একজন জেলা পরিষদের প্রার্থী। দিন বদলেছে। সে দিনের দাপুটে নেতা এখন খাসলতালুকেও নিষ্প্রভ।

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.