|
|
|
|
বিক্ষিপ্ত অশান্তি নিয়েই সাঙ্গ ভোট
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মনোনয়ন পর্ব থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ করছিল বিরোধীরা। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের পঞ্চায়েত ভোট কিন্তু মোটের উপর নির্বিঘ্নেই হল। তবে বুথ জ্যাম ও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন জায়গায়। ময়না, পটাশপুরের মতো কিছু জায়গায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন বলেন, “জেলার ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। কোনও বড় অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। গোলমালের অভিযোগে নন্দীগ্রাম থেকে দুই কংগ্রেস সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তমলুকের ময়না ব্লকে সকাল থেকেই গণ্ডগোলের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। আনংকিয়ারানা বুথে সিপিএম প্রার্থী পরিমল দাসকে তৃণমূল সমর্থকরা মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তাঁকে ময়না ব্লক প্রাথমিক কেন্দ্রে ভর্তি করাতে হয়। ময়নারই নৈছনপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কিশোরচক বুথে সকালে ভোট দিতে যাওয়ার সময় চন্দন জানা ও স্বপন জানা নামে দুই সিপিএম সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি সুব্রত মালাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “জমি-জায়গা নিয়ে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। দল যুক্ত নয়।” ওই ব্লকেরই বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক বুথে পোলিং এজেন্টদের বার করে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে বলে সিপিএমের তরফে অভিযোগ।
পাঁশকুড়া ১ ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজাহারপুর গ্রামের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ব্লকেরই হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটি বুথেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়াও ওই ব্লকের মাংলই ৬ নং বুথে সিপিএম প্রার্থী মেহেরযান বিবি অভিযোগ করেন সকালে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। পরে পুলিশ গিয়ে বুথে থাকা বাড়তি লোকজনকে সরিয়ে দেয়। তমলুক ব্লকে চকসিরাধা বুথে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বুথের ভেতরেই তৃণমূল-সিপিএম হাতাহাতি বাধে। খবর পেয়ে সিআরপিএফ ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। |
জেলা হাসপাতালে আনামুল। —নিজস্ব চিত্র। |
গোলমালের খবর এসেছে নন্দীগ্রাম থেকেও। নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের বটতলা বুথে তৃণমূলের সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।ওই বুথে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের বচসার সময় প্রার্থী মমতাজ বিবির দেওর আনামুল-সহ চার তৃণমূল সমর্থক আহত হন।
হলদিয়াতেও আপাত নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে গড়ে ৭১ শতাংশ। ভোটের লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে অনুযোগ করছিলেন ভোটাররা। সিপিএমের অভিযোগ, বেতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর, ইচ্ছাপুরে বিরোধী দলের সমর্থকদের ভোট দিতে যেতে দেয়নি শাসকদল। আবার সুতাহাটার কালিপুরে সিপিএমের পোলিং এজেন্টকে বুথের বাইরে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। জয়নগরের মাধবপুরে ৮৯ নম্বর বুথে বাইকবাহিনী ছাপ্পা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সুদর্শন মান্না বলেন, “সকাল থেকেই টহল দিয়েছে তৃণমূলের বাইকবাহিনী। বিকেলে জয়নগরের ৮৯ নম্বর, বানেশ্বরচকের ৮৬ নম্বর বুথে ছাপ্পা চালিয়েছে ওই বাইকবাহিনী।”
অন্যদিকে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তুষার মণ্ডল অভিযোগ করেন, “সুতাহাটার পার্বতীপুরে বোমা নিয়ে বুথের সামনে সিপিএমের দুষ্কৃতীদের ঘুরতে দেখা গিয়েছে।” মহিষাদলে লখ্যা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে বুথের সামনে টাকা দিয়ে ভোটারকে প্রলোভিত করার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এই নিয়ে বেলা ১০টা নাগাদ উত্তেজনা ছড়ায় আজড়া অমূল্যরতন গার্লস হাইস্কুলের বাইরে। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম।”
পটাশপুর ১ ব্লকের কুঞ্জবেড়িয়া বুথে রবিবার রাতে কংগ্রেস কর্মী নরেন্দ্রনাথ সাঁতরা ও সিপিএম কর্মী পূণর্চন্দ্র পড়িয়ার বাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূল বাহিনী। ওই ঘটনায় আটক করা হয় দু’জন তৃণমূল কর্মীকে।
সোমবার সকালে পটাশপুর ২ ব্লকের সাউৎখণ্ড পঞ্চায়েত এলাকার সাতশতমাল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই বুথে শুধুমাত্র তৃণমূলেরই দু’জন পোলিং এজেন্ট রয়েছেন। নির্দল প্রার্থীর সমর্থক স্থানীয় শেখ মুজিবর রহমান, শেখ রবিফল আলি বলে, “তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা দেখে নিচ্ছেন ওদের ভোট দেওয়া হচ্ছে কি না। অনেকের ভোটার পরিচয়পত্রও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমন হলে ভোট দিয়ে কী লাভ? যারা আপত্তি করছে, তাদের নামের পাশে লাল দাগ দিয়ে রাখা হচ্ছে।” যদিও ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার কমলাকান্ত জানা বলেন, “ভোট নির্বিঘ্নেই চলছে।” ওই ব্লকেরই আরএসপি দলের জেলা পরিষদ প্রার্থী মন্টু দাস মহাপাত্রের অভিযোগ, সন্ত্রাস ছড়াতে রবিবার রাতে ছোট উদয়পুর বুথের কাছে বোমাবাজি করেছে তৃণমূল। প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রহৃত হন দলীয় কর্মী সুনীত মহাপাত্র।
দাঁড়িপাটনা বুথে বিরোধী ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে তৃণমূল কর্মী রবি দাস, নন্দ বিশাই, সৌমেন বর্মন ও নান্টু বর্মন আহত হন। তাঁদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেলমাবাদ সরোজিনী বিদ্যাপীঠ বুথে ভোট চলাকালীন তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে আহত হন তৃণমূল কর্মী বিমল সাঁতরা। তাঁকে পটাশপুর ২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেলমাবাদ পশ্চিম বুথে নির্দল প্রার্থী স্বপন মান্নাকে মারধর করে তৃণমূল কর্মীরা। সাহাপুর বুথের ভিতরে তৃণমূল কর্মীরা ঢুকে পড়ায় লাঠি চালিয়েছিল সিআরপিএফ। কিন্তু বাহিনী চলে যাওয়ার পর ফের বিরোধী দলের কর্মীদের তৃণমূল কর্মীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। বলভদ্রপুর বুথে প্রিসাইডিং অফিসার নিজের উদ্যোগে গাড়ি পাঠিয়ে বিরোধী ভোটারদের বুথে আনার ব্যবস্থা করলে তৃণমূল তার প্রতিবাদ করে। বিরোধীদের পাল্টা প্রতিবাদে গোলমাল শুরু হয়। তারপরই তৃণমূল বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। সেই কারণে দুপুরে কিছুক্ষণ ওই বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পটাশপুর ২ ব্লকের ক্ষেত্রপাল ও চকভোগী বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
খেজুরির বিভিন্ন জায়গায় বুথদখলের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও দেশপ্রাণ ব্লক, রামনগর ১, ২, ভগবানপুর ২ ও কাঁথি ৩ ব্লকে একই অভিযোগ উঠেছে। কাঁথি ১ ব্লকের নয়াপুট গ্রাম পঞ্চায়েতের চুচুঁড়াপুটে কংগ্রেস প্রার্থী শিবেন্দু ভুঁইয়াকে মারধর করে তৃণমূলের লোকেরা। শিবেন্দুবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। রামনগর ১ ব্লকের বাগপুর প্রাথমিক স্কুলের বুথে সিপিএমের ক্যাম্প অফিসে তৃণমূল হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। নির্মল সেনাপতি নামে এক সিপিএম সমর্থকের মাথা ফেটেছে।
|
ভোটকর্মীর মৃত্যু
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
ভোট চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক ভোটকর্মীর। মৃত সুকুমার পাত্র (৫৯) পটাশপুর থানা এলাকার পঁচেট গ্রামের বাসিন্দা। পটাশপুর ২ ব্লক ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের কর্মী ছিলেন তিনি। ভগবানপুর ১ ব্লকের বিভীষণপুর পঞ্চায়েত এলাকার দ্বারিকাপুর বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে চতুর্থ ভোটকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন সোমবার। হঠাৎই বুকে ব্যাথা শুরু হয় তাঁর। তড়িঘড়ি ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল ৫টা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। |
|
|
|
|
|