রাষ্ট্রপতি-সাক্ষাৎ দৌড়ে কামদুনি বনাম নন্দীগ্রাম
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে বিচার চাইতে গিয়েছে কামদুনি। এ বার সেই পথেই রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে নন্দীগ্রাম।
রাষ্ট্রপতির কাছে কামদুনির টুম্পা, মৌসুমী কয়ালদের পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কংগ্রেস নেতা তথা রেল মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। নন্দীগ্রামের মানুষদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি তথা হলদিয়ার সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষন করে খুনের অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে, সিবিআইয়ের তদন্তের আর্জি নিয়ে কামদুনির বাসিন্দারা যেমন রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ, তেমনই রেলের প্রকল্পে জমি দিয়ে চাকরি না-পাওয়া নন্দীগ্রামবাসীদের রাইসিনা হিলসে নিয়ে যেতে চান শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “রেল প্রতিমন্ত্রী কামদুনির অত্যাচারিত মানুষকে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর দফতর যে জমি নিয়ে নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না তা তো মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই সামিল! নন্দীগ্রামের মানুষ তা জানিয়ে বিহিত চাইতে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন।” শুভেন্দু ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
কামদুনির পরে নন্দীগ্রাম!শুভেন্দু জানান, তখন রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রাম-দেশপ্রাণ রেল প্রকল্পের জন্য নন্দীগ্রামের প্রায় ৯০০ জন জমি দিয়েছিলেন। পরিবার পিছু একজনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েই রেল জমি নিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪১৩ জনকে রেল চাকরি দিয়েছে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর থেকেই নন্দীগ্রামের বাকি জমিদাতাদের প্রতিশ্রুতি মতো রেল চাকরি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। তাঁর অভিযোগের তির অধীরবাবুর দিকেই। কারণ অধীরবাবু রেলের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরই নন্দীগ্রামের জমিদাতাদের চাকরি দেওয়া বন্ধ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আধিকারিকদের খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুভেন্দু জানান। রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করা ছাড়াও নন্দীগ্রামের জমিদাতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাসভবন ও রেলভবনের সামনে ধরনাতে বসার কর্মসূচিও নিচ্ছেন তাঁরা।
শুভেন্দু তথা তৃণমূলের এই প্রয়াস যে তাঁদের বা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কামদুনির পাল্টা চাল দেওয়ার জন্য তা বুঝেছেন অধীরবাবুও। তাঁর কথায়, “এই সময়টাই উনি (শুভেন্দু) বেছে নিলেন কেন? কামদুনি নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে বলে! সংসদে নন্দীগ্রামের জমিদাতাদের চাকরির বিষয়টি কোনও দিন তুলতে দেখিনি তো!” শুভেন্দুদের রাষ্ট্রপতির কাছে দরবারের বিষয়কে কোনও গুরুত্ব না দিয়েই অধীরবাবুর মন্তব্য, “রাষ্ট্রপতি কেন, ওঁরা বিশ্বপতির কাছে যান আমার আপত্তি নেই! আমি যে কাজ করেছি তা নিয়ে ওঁরা যা কিছু বলুন, আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।” নন্দীগ্রামের জমিদাতাদের একাংশ কেন রেলের চাকরি পাচ্ছেন না তা নিয়ে অধীরবাবুর পাল্টা দাবি, “শুভেন্দু ওঁদের তিন প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকেই জিজ্ঞাসা করুন কেন নন্দীগ্রামের জমিদাতাদের চাকরি মিলছে না। ওঁদের (তৃণমূল) আমলেই তৈরি কিছু প্যারামিটার রয়েছে। মানে প্রার্থীদের ডিগ্রি বা শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবেই চাকরি হচ্ছে না।”
এই বিষয়ে রেলের এক আধিকারিক জানান, নন্দীগ্রাম থেকে দেশপ্রাণ পর্যন্ত ১৮.৫ কিলোমিটার দূরত্বের নতুন রেল লাইনের জন্য ১০৩৭ জনের জমি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮৪৪ জনের জমি নেওয়া হয়েছে। চাকরি দেওয়া হয়েছে ৪১৩ জনকে। কিন্তু ৩২৪ জন বেশি বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় চাকরির অনুপযুক্ত। বাকি ৮৯ জনের চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু রেলে গ্রুপ ‘ডি’ পদের নিয়োগ বিজ্ঞাপন দিয়ে করার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, সে জন্য নতুন করে কোনও চাকরিতে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তবে ওই ৮৯ জনের চাকরির বিষয়টি আগামী মাসের মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়ে যাবে এবং ওই মাসের মধ্যেই তারা কাজে যোগদান করতে পারবে।
কামদুনি না নন্দীগ্রাম, রাষ্ট্রপতির কাছে দরবারের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে তা জানার অপেক্ষায় বঙ্গবাসী!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.