|
|
|
|
শিলাদিত্যর ক্ষতিপূরণে দু’লক্ষ টাকা দিক রাজ্য, চায় কমিশন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বছরখানেক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে আটক করা হয়েছিল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তাঁকে চিহ্নিত করেছিলেন মাওবাদী হিসেবে। এর পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুরের বাসিন্দা শিলাদিত্য চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সোমবার সেই শিলাদিত্যকে তাঁর সামাজিক সম্মান নষ্ট হওয়ার জন্য দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সুপারিশ করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। সোমবার মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এবং কমিশনের অন্য দুই সদস্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল ও সৌরীন রায় রাজ্য সরকারকে এই সুপারিশ করেছেন। শিলাদিত্যর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ বার তা হলে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলুন, শিলাদিত্য মাওবাদী নয়। সে এক জন সাধারণ দরিদ্র গ্রামবাসী। আমাকে অপবাদ থেকে মুক্তি দিন।” তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারেরও আর্জি জানিয়েছেন জঙ্গলমহলের এই যুবক।
এর আগে ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে গ্রেফতারি ও মানহানির খেসারত হিসেবে ২০১২ সালের ১৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকেও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল মানবাধিকার কমিশন। অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে যে দুই পুলিশ কর্মী গ্রেফতার করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার জন্যও রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল। প্রায় সাড়ে ন’মাস পর রাজ্য সুপারিশগুলি মানবে না বলে কমিশনকে জানিয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে শিলাদিত্যকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশও আদৌ মানা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
আগের সুপারিশ কার্যকর না হওয়া সত্ত্বেও মানবাধিকার কমিশন আরও একটি সুপারিশ কেন করতে গেল? কমিশনের চেয়রম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকার সুপারিশ না মানলে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, সুপারিশ কার্যকর করানোর ক্ষেত্রে আমাদের হাতে কোনও আইন নেই।” ব্যঙ্গচিত্র-মামলায় রাজ্য সরকার সুপারিশ না মানলেও, কিছু ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা হয়েছে বলে দাবি করেন অশোকবাবু।
২০১২ সালের ৮ অগস্ট বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল থেকে প্রথমে আটক করা হয়েছিল শিলাদিত্যকে। সে দিনই তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু দু’দিন পরে, ১০ অগস্ট দুপুরে মাঠে চাষ করার সময় শিলাদিত্যকে ফের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। দিনভর থানা লক-আপে আটক রাখার পর রাতে বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ এসে শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করে। মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীন ‘হাই সিকিউরিটি জোন’-এ অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে টানা ১৪ দিন জেল খাটেন শিলাদিত্য। তার পর জামিন পেলেও মামলা থেকে মুক্তি মেলেনি। চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিনপুরের লোয়াগা গ্রামে মাটির বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে শিলাদিত্যর সংসার। রোজ সকালে ঝাড়গ্রাম মুখ্য ডাকঘর থেকে বাসে যে চিঠির ব্যাগ আসে, তা গ্রামের ডাকঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন বিনপুরের ওই যুবক। বছর দু’য়েক আগে যক্ষ্মা ধরা পড়ে তাঁর। তার পর থেকেই বাসমালিক তাঁকে এই হালকা কাজ দিয়েছেন বলে শিলাদিত্য জানিয়েছেন। তাঁর সম্বল এক বিঘে জমি। সেখানে ধান ও মরসুমি চাষও করেন শিলাদিত্য। এ দিন তিনি বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকা পেলে সংসারের অভাব হয়তো কিছুটা মিটবে, কিন্তু অসম্মান ও অপমানের জ্বালা কি তাতে জুড়োবে? সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় মুখ্যমন্ত্রী আমাকে মাওবাদী তকমা দিয়েছিলেন।” শিলাদিত্যর দাবি, কমিশনের সুপারিশের পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মাওবাদী তকমা থেকে মুক্ত করে দিন!
রাজ্যের মানবাধিকার কর্মীরা এবং আইনজীবীদের একাংশের মত মানবাধিকার কমিশনের এই সুপারিশে প্রমাণ হল, শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল। তিনি যে মাওবাদী নন, তা-ও প্রমাণিত হল বলে তাঁদের মত। শিলাদিত্যর স্ত্রী খুকুমণি বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকে বড়ই ভয়ে থাকি। এ দিন মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ শুনে ভরসা পাচ্ছি।” শিলাদিত্যকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে অম্বিকেশবাবু এ দিন বলেন, “এটা সুখবর। তবে আমার আশঙ্কা, রাজ্য সরকার এই সুপারিশ মানবে না।” তবে রাজ্য সরকার সুপারিশ না মানলেও, শিলাদিত্য বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে আর্জি জানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালত কমিশনের সুপারিশ মানতে রাজ্য সরকারকে বাধ্য করাতে পারে বলেও আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন। অম্বিকেশবাবু বা তাঁর প্রতিবেশী সুব্রতবাবু অবশ্য কমিশনের সুপারিশ মানার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হননি।
|
পুরনো খবর: মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিশৃঙ্খলায় অভিযুক্ত শিলাদিত্যর জামিন |
|
|
|
|
|