কমনওয়েলথ দাবায় বরাবরই আমাদের দাপট থাকে। এ বারও ব্যাতিক্রম হল না। ওপেন, জুনিয়র আর মেয়ে তিন বিভাগ মিলিয়ে ন’টা পদকের মধ্যে ভারতীয় দাবাড়ুরা আটটাই জিতে নিল।
কমনওয়েলথ দাবার সঙ্গে এ বার দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেন চেস চ্যাম্পিয়নশিপও হল। ২৯টা দেশ থেকে ন’শোর কাছাকাছি প্লেয়ার খেলল। প্রথম দশ বাছাইয়ের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয় থাকলেও প্রথম তিন বাছাই কিন্তু কোনও ভারতীয় ছিল না। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের জন্য লড়াইটা কতটা কঠিন ছিল। তবু সব প্রতিবন্ধকতা টপকে উঠে এল সেই ভারতীয়রা দাবাড়ুরাই। বিশেষ করে অভিজিৎ গুপ্ত। রাজস্থানের ছেলে। বছর তেইশের অভিজিৎ এর আগে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এখানে দুর্দান্ত খেলল। শুধু কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল খেলে সোনা জেতাই নয়, দু’টো টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সার্বিক চ্যাম্পিয়নও ও-ই। অভিজিৎ কুন্তের পর আরও এক অভিজিৎ দাবার জগতে আলো ছড়ানো শুরু করেছে। |
এ বার একটু নিজের কথা বলি। বেশ কয়েক বছর পর জাতীয় দলের সঙ্গে বিদেশে খেলতে এসে ভাল লাগল। যদিও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার মতো প্রস্তুতি ছিল না। তার পরেও ওপেন ক্যাটেগরিতে সম্ভাব্য এগারো পয়েন্টের মধ্যে সাড়ে আট পয়েন্ট পেয়ে আমার রুপো জেতাটা নিজের মতেও দারুণ অ্যাচিভমেন্ট। এগারো রাউন্ডের মধ্যে ন’রাউন্ড আমিই লিড করেছি। কিন্তু দশম রাউন্ডে শীর্ষ বাছাই ইউক্রেনের ফেডোরচুকের কাছে হেরেই আমার সোনাটা হাতছাড়া হল। তা সত্ত্বেও বলব, চার বছর পর আন্তর্জাতিক ইভেন্টে নেমে এ রকম সাফল্য আলাদা প্রাপ্তি। বিশেষ করে এই সাতচল্লিশ বছর বয়সে। এখন তো নিজের চেস অ্যাকাডেমির কাজেই সারা দিনের বেশিরভাগটা কেটে যায় আমার। তার পর বোর্ডে তরুণ প্লেয়ারদের সঙ্গে টিকে থাকাটাই বিরাট ব্যাপার। রুপো জেতাটা তাই আরও কয়েক বছর খেলার অনুপ্রেরণা দেবে।
এখানে অসাধারণ সমুদ্রের সামনে আমাদের হোটেল ‘বোর্ড ওয়াক’। দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছনোর পর এখানে থাকতে হবে ভেবে প্রথমেই মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল। ছবির মতো সুন্দর সব দৃশ্য। হোটেলের ভিতরটাও কিছু কম যায় না। একটা বিরাট হলে একসঙ্গে সব গেম চলছে। ভাবুন একবার, ৯০০ দাবাড়ু এক জায়গায়, একসঙ্গে খেলছে! অথচ গোটা হল নিঃশব্দ! আলপিন পড়লেও আওয়াজ পাওয়া যাবে। আয়োজনের কোনও ত্রুটি নেই। এমনকী শেষ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা এলেন পুরস্কার দিতে। অভিজিৎ এ দেশের প্রেসিডেন্টের হাত থেকেই ট্রফি নিল। শেষ দু’দিন বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্যারি কাসপারভ। ওঁর মতো গ্রেট চ্যাম্পিয়নের হাত থেকে আমার পুরস্কার পাওয়াটাও বিরাট প্রাপ্তি।
বাংলা থেকে আমার ছাত্রী মেরি অ্যান গোমস মেয়েদের বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতল আর আমার ছেলে দিশান-ও অনূর্ধ্ব ১৪-র ‘বি’ গ্রুপে সোনা জিতেছে। ধোনিরা এ দেশে আসার কয়েক মাস আগেই সব মিলিয়ে আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযান কিন্তু দুর্দান্ত সফল। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার আনন্দটাও তাই দশগুণ হয়ে গিয়েছে! |