|
|
|
|
ভোটের ঘোষপুর মাতল ‘নির্দল’ দুই প্রার্থীর লড়াইয়ে
পীযূষ নন্দী • খানাকুল |
দলের শত চেষ্টাতেও বিবাদ মেটেনি। শেষমেশ খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদ সিদ্ধান্ত নেন, দু’জনেই নিজের নিজের শক্তি পরীক্ষা দেবেন দলের টিকিট ছাড়া। সেই সিদ্ধান্ত মতোই খানাকুলের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা রফিক গায়েন এবং নজরুল ইসলাম খান নেমেছিলেন ভোটের ময়দানে। ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে।
রফিকের প্রতীক আম। নজরুলের নারকেল গাছ। রফিক নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। নজরুল এম এ পাশ। রফিক ৪৫। নজরুল ৩৭। খানাকুল তো বটেই, গোটা মহকুমার তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এই লড়াই নিয়ে উত্সাহী।
খানাকুল-১ ব্লকে মোট ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকার নির্বাচন বলতে খালি ঘোষপুর পঞ্চায়েতের ২০টি আসনের মধ্যে একটি আসনেই ভোট হল সোমবার। ওই আসনেই লড়লেন রফিক ও নজরুল।
বাদবাকি জেলা পরিষদের তিনটি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯টি আসন এবং পঞ্চায়েতের ১৯২টি আসনের মধ্যে ১৯০টি আসনেই তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে। একটি আসনের মনোনয়নপত্রে ত্রুটি থাকায় তা বাতিল হয়েছে। ঘোষপুর পঞ্চায়েতের উত্তর ঘোষপুর গ্রামের এই ৩৩ নম্বর বুথটির মোট ভোটার ৭২৪। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম। ৯০ শতাংশই দিনমজুর ও কৃষিজীবী। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রটি ছিল ঘোষপুর বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে ভোটদানে গ্রামবাসীদের প্রবল আগ্রহ। ছিল মহিলাদের লম্বা লাইন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জওয়ান সারাক্ষণ সেখানে ছিলেন। ছিলেন জনাপাঁচেক পুলিশকর্মীও। বিডিওকে বারবার আসতে দেখা গিয়েছে। ভোটের শুরু থেকেই ছিলেন যুগ্ম বিডিও। সকাল ১০টা নাগাদ একবার পর্যবেক্ষকও ঘুরে গিয়েছেন।
শুধু ভোটকেন্দ্রেই নয়, গ্রামের ভিতরে গিয়েও দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের টহল। গ্রামবাসীদের প্রতি পুলিশের সতর্কবার্তাও শোনা যায়, ‘ভাইয়ে ভাইয়ে কোনও অশান্তি যেন না হয়। ভোটদানে কেউ যেন বাধা না পান’।
বিধায়ক দুই প্রার্থীকেই ‘ভাই’ বলেন। তবে, দুই প্রার্থীর মধ্যে সদ্ভাব দেখা গেল না। দু’জনই দু’জনের সমালোচনায় মুখর। নজরুল বলেন, “সেয়ানে- সেয়ানে লড়াই হল না। এটাই যা দুঃখের। কে ভাল, কে মন্দ তা দল বাছতে পারল না। আগামী দিনে দল কাকে গুরুত্ব দেবে, সেই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে। পঞ্চায়েতে ভাল এবং শিক্ষিত মানুষ চাইছেন গ্রামবাসী। আমাদের গোষ্ঠীর সকলেই সুশিক্ষিত, রুচিবান। ওরা (রফিক) এলাকায় সন্ত্রাস করেছে।” রফিকের পাল্টা, “এটা আমার নিজের বুথ। সমাজসেবামূলক কাজ করি। মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতা আছে। শিক্ষিত হলেই যে ভাল মানুষ হয় না, তার প্রমাণ নজরুল। বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বহু টাকার প্রতারণা করেছে। তার থেকে মুক্তি পেতেই ও জনপ্রতিনিধি হতে চাইছে।”
কী বলছেন বিধায়ক?
ইকবাল বলেন, “আমাদের দু’টি ভাই লড়ছে। গ্রামবাসীরাই ঠিক করে নেবেন তাঁদের পছন্দের লোককে। আমি এর বেশি কিছু বলব না। তা হলে পক্ষপাতিত্ব হয়ে যেতে পারে।”
ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে অবশ্য গ্রামবাসীরা আলোচনা করলেন, কে সত্ ভাবে জীবনযাপন করেন, কে সারাক্ষণ হেসে কথা বলেন, কে বড়দের সম্মান করেন, কার গ্রামোন্নয়নের উদ্যোগ রয়েছে! |
|
|
|
|
|