সাক্ষাৎকার...
রাজ্যের হাতে আসলে যথেষ্ট ক্ষমতা আছে


আমেরিকার হাঁচি হলে বাকি দুনিয়ার নিউমোনিয়া হয়। টাকার পতনটা হল মার্কিন ফেডারাল ব্যাঙ্কের প্রধান বার্নানকে-র ঘোষণার জন্য। ওদের নীতিতে কোনও ভুল ধরা যায় না। আমেরিকা বিশ্বের প্রধান বাজার। তাই সবাই সংকোচন করছে। যারা বাইরে থেকে বিনিয়োগ করছে, তারাও পরিকল্পনা বদলাচ্ছে। শেয়ার বাজার ও টাকার দামে তারই প্রভাব পড়ছে।
আসলে ইউরোপেও যতটা খরচ কমানো দরকার, ততটা ওরা কমাতে পারছে না। কিন্তু ওই দেশগুলিতে ঘাটতির হার এতটাই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে সেটা কোনও মডেলেই চলতে পারে না। ওরা খুব অস্টারিটি, মানে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে। কিন্তু খরচ যতটা কমানো দরকার, ততটা পারছে না। এখনও নন-পারফর্মিং ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সেই ঋণপত্র বিক্রি করে আবার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক বৃদ্ধি মানে যে রিয়াল গুড্স এবং রিয়াল সার্ভিস— সে ব্যাপারে কিন্তু হাভার্ড ও শিকাগো একমত। শুধু ঋণ-নির্ভর বৃদ্ধি চলতে পারে না। কারণ তা হলে আসল জিনিসটা একই থাকছে। শুধু একই জিনিস নিয়ে কেনাবেচা বেড়ে যাচ্ছে। প্রশ্নটা হল, যন্ত্রপাতি কি মাটিতে বসানো হয়েছে? তার ভিত্তিতে কী নতুন জিনিসপত্রের উৎপাদন হচ্ছে? আমাদের সমস্যা হল, বিদেশ থেকে আমদানির খরচ। সোনার থেকেও কয়লা ও তেলের বিষয়ে আমরা কী করতে পারি, সেটা দেখার।


সংস্কার প্রক্রিয়ায় সময় লাগে। বিশেষ করে আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে। এই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নেই তো ক্ষমতাসীন জোটের বহর কমল। কোনও কোনও দেশে তো সংসদের খুব কমসংখ্যক আসন নির্বাচনের জন্য যায়। সেখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তো কোনও বিতর্কই হয় না। আমার মনে হয়, গেম থিয়োরির ভাষায় জোট রাজনীতি একেবারেই নেগেটিভ সাম গেম। কিন্তু একেবারে গণতন্ত্র না থাকাটাও দুঃস্বপ্ন।


শিল্প সংস্থাগুলিও কিন্তু অনেক অর্থ, অনেক সম্পদ নিয়ে বসে আছে। আসলে প্রকৃত বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রে সংস্থার সিইও-দের উপরেও নির্ভর করে। তবে সরকারের তরফেও দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার কাজগুলো করতে হবে। পূর্ব এশিয়া বা লাতিন আমেরিকার সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হল, ওখানে যিনি সেক্রেটারি, তিনি হয়তো ওই ক্ষেত্রেরই কোনও সংস্থার শীর্ষকর্তা ছিলেন। ফলে তিনি অন্যান্যদের সমস্যাটা বুঝছেন। সিঙ্গাপুরে মন্ত্রীদের বেতন সিইও-দের থেকেও বেশি, কিন্তু দুর্নীতি করলে রাস্তা ঝাঁট দিতে হবে। এগুলো হয়তো সামাজিক পার্থক্য।

দু’টি ক্ষেত্রেই কাজ চলছে। প্রত্যক্ষ কর বিধির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতামত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ হল, সংসদীয় কমিটির তোলা বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে হবে। এর পরে সংশোধিত প্রত্যক্ষ কর বিধি বিল সংসদে পেশ করতে হবে। পণ্য পরিষেবা কর বা জি এস টি-র বিষয়টা আর একটু জটিল। কেন্দ্র এবং রাজ্য, দু’টো মিলিয়ে মতামত আছে। তবে মূল কাঠামোগত বিষয়গুলির সমাধান হয়ে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের ক্ষেত্রে আমরা রাজ্যগুলিকে কতটা ক্ষতিপূরণ দিতে পারব।


অনেক রাজ্য আগামিকালই জি এস টি চালু করতে চায়। রাজ্যগুলি এখন বুঝেছে, যে জি এস টি কাউন্সিল তৈরি হবে, তাতে রাজ্যেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। তা হলে কী ভাবে রাজ্যের ক্ষমতা চলে যাবে? তা ছাড়া, প্রত্যেকটা রাজ্য নিজেদের বিল আনবে। কিন্তু যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট-এর মতো এখানে কোনও রাজ্য প্রথমে এল, অন্যরা পরে যোগ দিল, তা তো হতে পারে না! কারণ ভ্যাটের ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের ব্যাপার ছিল না, এখানে তা হবে। কোনও রাজ্য না এলে তারা পরিষেবা কর আদায় করতে পারবে না। শিল্পসংস্থাগুলি ওই সব রাজ্যে পরিষেবার ক্ষেত্রে কাঁচামালের কর ছাড় নিতে পারবে না। ব্যবসায়ীদেরও অসুবিধা হবে। কারণ কোনও রাজ্য যোগ না দিলেও কেন্দ্র সেখানে গিয়ে খুচরো ব্যবসাতেও কর বসাতে পারে।


সামাজিক ক্ষেত্রের জন্য বাজেটে যথেষ্টই টাকা রাখা হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। যাকে বলে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং। পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। বিনিয়োগ চাই। শুধু চাহিদা বাড়লেই হবে না। বিনিয়োগ ছাড়া আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে না।


কর ব্যবস্থায় চোখে পড়ার মতো আমার যে অবদান, তা হল এই দু’টি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট। দেশে, এমনকী বিদেশেও কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন (জি এ এ আর) রিপোর্ট সমাদৃত হয়েছে। ওই দু’টি কমিটির রিপোর্টের পর আমাকে তো কর ব্যবস্থার রকস্টার বলা হচ্ছিল! শুনে কিছুটা মজাই পেয়েছিলাম। আমরা একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। যাতে ব্যবসায় সকলেই সমান সুযোগ পায়, আবার প্রশাসনও সত্যিকারের কর ফাঁকি রুখতে পারে।


রাজ্যের হাতে আসলে যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। কোনও বাঁধন নেই। সমস্যাটা হল কেন্দ্রীয় অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্প যেখানে প্রয়োজন, সেখানে কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে বাইপাস করতে হবে। যদিও রাজ্যগুলি অনেক সময় বলে, যেখানে রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, সেখানেই কেন্দ্রীয় অর্থ যায়। কিছু বড় রাজ্যে এ সমস্যা আছে। এতে একটা লপসাইডেড গ্রোথ হয়।


অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই ধরনের বিশেষ প্যাকেজে খুব একটা লাভ হয় না বলেই আমার ধারণা। যেমন, উত্তর-পূর্বের রাজ্য, জম্মু-কাশ্মীর বা উত্তর-পশ্চিমের হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগ টানতে শিল্পে কর ছাড়ের মতো সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতটা লাভ হয়েছে? যত দিন প্রসেসিং ইত্যাদিতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, সাধারণত তত দিনই তারা থেকেছে। যদি টেলিভিশন বেরোয় কারখানা থেকে, দেখতে হবে সেখানে টেলিভিশন শুধুই প্যাকেজিং হচ্ছে না উৎপাদন হচ্ছে? সত্যিই উৎপাদন হলে সেখানে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ হয়, কারখানা-যন্ত্রপাতি বসে। ফলে এই সব ইনসেনটিভ লম্বা দৌড়ে কাজ করে না। তা ছাড়া রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে অর্থ কমিশনের যে সূত্র রয়েছে, তা জনসংখ্যা ও অনগ্রসরতার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে। তার উপরে এই সব বাড়তি কর ছাড়, সুবিধা দিলে অন্য যোগ্য রাজ্য বঞ্চিত হয়।


আমার মামাবাড়ি উত্তর কলকাতায়। ঠাকুরদার বাড়ি ছিল দক্ষিণ কলকাতায়। দুই সংস্কৃতি জুড়ে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় হিন্দি হাই স্কুলে পড়েছি। কলেজ প্রেসিডেন্সি। কিন্তু বাবা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। ভারত জুড়ে বদলির চাকরি। ফলে বহু দিন চেন্নাইতে ছিলাম। ম্যাট্রিক ওখান থেকেই পাশ। তামিল সংস্কৃতিটাও তাই আমার মধ্যে ঢুকে রয়েছে। ভাল লাগে। তামিলরা খুব গোছানো হয়। হয়তো সেই কারণেই আমাদের কাজের অ্যাপ্রোচটা মনে হয় অনেকটা একই রকম। যদিও, আশা করি, প্রয়োজন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই অর্থমন্ত্রী আমাকে কাজে ডাকেন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.