কী করে ক্ষমতায় থাকতে হয়, সি পি এমের থেকে এখন সেটা অনুকরণের চেষ্টা করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাঁকে পড়ে-যাওয়া সি পি এমকে পাঁকেই চুবিয়ে মারার নেশায় তৃণমূল কংগ্রেসও সেই পাঁকে পড়েছে। পাঁকে দাঁড়িয়েই সি পি এম চৌত্রিশ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে। সময়টা বড় কম নয়। যদি সেই তত্ত্ব প্রয়োগ করে চোদ্দো বছরও ক্ষমতায় থাকা যায়, মন্দ কী!
একটা ব্যাপার পরিষ্কার হওয়া দরকার। সি পি এম ভাবছে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম না হলে পশ্চিমবঙ্গে তারা চিরস্থায়ী হয়ে যেত,আর তৃণমূল ভাবছে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম টাইপ বাদ দিয়ে বাদবাকি যত রকম হয়, করে যাও। এই বিভ্রম থেকে শাসক এবং বিরোধী সবাইকেই বেরিয়ে আসতে হবে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম না ঘটলেও ক্ষমতার হাতবদল হত কোনও এক সময়। অন্যান্য রাজ্যে যেমন হয়।
|
গত বিধানসভা নির্বাচনে ‘আমরা ২৩৫’ থেকে ৬০-৬২-তে ঠেকে গেল। অন্য দিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের একারই হয়ে গেল ১৮৪। এই ফলাফলে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে দু’তরফেই বিভ্রম হওয়া স্বাভাবিক। সিঙ্গুর নিয়ে যে-আন্দোলনের নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেস দিয়েছিল, তাতে সেখানকার মানুষ দ্বিধান্বিত থাকলেও সারা রাজ্যের মানুষ তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, এতে সিঙ্গুর বা রাজ্যের কোনও উপকার হবে না। নন্দীগ্রাম সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। আসলে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের আগে থেকেই সি পি এমের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছিল। অন্য দিকে, তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল। তার কারণ কোনও পক্ষই কি বিশ্লেষণ করে দেখবে না?
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রাজনৈতিক মূল্যবোধকে মর্যাদা দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে হলে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সি পি এম উভয় পক্ষেরই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম বিভ্রম থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। তা না-হলে দলের মধ্যে শুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শুরু করার আসল জায়গাটা খুঁজে পাবে না কোনও দলই। সাধারণ মানুষের সমস্যা বাড়তে থাকবে। তা, সে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক।
জয়ন্ত দাস। দক্ষিণ কৃষ্ণপল্লি, মালদহ |