মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরানো যে যাবে না টেলিগ্রামকে, জানা ছিল সকলেরই। তবু তার শেষ দিনেও স্বাভাবিক রাখা গেল না পরিষেবা। ফের নজির গড়ল কাজ-ভাঙানোর রাজনীতি।
টেলিগ্রাম বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার কলকাতায় সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিসে দিনভর বিক্ষোভ দেখাল সিপিএম-প্রভাবিত কর্মী সমিতি। দুই কর্তাকে ঘেরাও করে স্মারকলিপি দেন বিক্ষোভকারীরা। দিনভর প্রায় বন্ধ রইল শহরের নানা প্রান্তে টেলিগ্রাম পৌঁছে দেওয়ার কাজ। রবিবার ছিল এ শহর থেকে টেলিগ্রাম পাঠানোর শেষ সুযোগ। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সে দিন থেকেই কর্মীরা অসহযোগিতা করতে শুরু করে দেন। শেষ দিন এই রকম পরিস্থিতি সারা দেশের আর কোনও জায়গায় হয়নি। আন্দোলন না-করে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখলে আরও অনেকে শেষ দিন পরিচিতদের টেলিগ্রাম পাঠানোর সুযোগ নিতে পারতেন। |
চেয়ার-টেবিল ফাঁকা। কাজ বন্ধ রেখে এ ভাবেই চলল কর্মীদের প্রতিবাদ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র। |
সোমবার অফিস শুরুর পরে ক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশ বিভাগের বিভিন্ন অংশ ঘুরে মিছিল করে স্লোগান দেন। বেলা একটা নাগাদ তাঁরা বিভাগীয় প্রধান সুব্রতকুমার দাসের কাছে দল বেঁধে প্রতিবাদ জানান। টেলিগ্রাফের সুযোগ অব্যাহত রাখতে স্মারকলিপি দেন। পরে আড়াইটে নাগাদ বিক্ষোভরত কর্মীরা ১ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে বিএসএনএল-এর চিফ জেনারেল ম্যানেজার এস কে ভাদুড়ির কাছে গিয়েও ক্ষোভ জানান। ফলে মার খায় বিভাগের স্বাভাবিক কাজ। রবিবার সিপিএমপন্থী কর্মীদের অসহযোগিতার জেরে শেষ দিন সিটিও-র তিনটি কাউন্টারের মধ্যে দু’টি ছিল ফাঁকা। অনভ্যস্ত হাতে একটি কাউন্টার থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন জয়ন্ত চক্রবর্তী নামে এক অফিসার। কর্তৃপক্ষের আফশোস, এক জন অভিজ্ঞ কর্মী সেখানে উপস্থিত থাকলে আরও বহু মানুষ রবিবার টেলিগ্রাম পাঠানোর সুযোগ পেতেন।
কিন্তু কাজের সময়ে বিভাগে বিক্ষোভ দেখানো কতটা যুক্তিসঙ্গত?
আন্দোলনকারী সংগঠনের সম্পাদক অনিন্দ্য সরকার বলেন, “টেলিগ্রাফ চালু রাখার দাবিতে অনেক দিন ধরেই আমরা নানা ভাবে কর্তৃপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কর্মীদের বিক্ষোভ যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত। কলকাতার সিটিও থেকে টেলিগ্রামের সংখ্যা কমছে বলে কর্তৃপক্ষ যে দাবি করছেন, তার ভিত্তি নেই। এ রাজ্যে বছরে এখনও টেলিগ্রাম-বাবদ ১০-১২ লক্ষ টাকা আয় হয়।”
তাঁর দাবি, বিভিন্ন সেনা-ছাউনিতে এখনও টেলিগ্রামের যথেষ্ট চাহিদা আছে। অনিন্দ্যবাবুর দাবি, কলকাতার কর্তারা দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দিল্লি থেকে সেই দাবি বিবেচনা করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
গত মাসেই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল ১৪ জুলাই শেষ বারের জন্য টেলিগ্রাম করা যাবে। রবিবার, শেষ দিন রাত ১১টা ৩ মিনিট পর্যন্ত কলকাতার সিটিও থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে ৩৭৬টি টেলিগ্রাম পাঠানো হয়। কলকাতায় জমা হয় বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০০টি টেলিগ্রাম-বার্তা। সংস্থার তরফে জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “এগুলি এ দিন সকালেই মহানগরীর ১০টি বিভাগীয় অফিস (ডিটিও) থেকে বিলি করার কাজ শুরু হয়েছে।” কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, রবিবার যাঁরা টেলিগ্রাম করেছেন, তাঁদের বার্তাগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। |