ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী দাঁড়ালেন নির্দলে
দল বদলেই তৃণমূল প্রার্থী ফব কর্মী
ক জন গত ৩৪ বছর ধরে ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের একনিষ্ঠ কর্মী। প্রার্থী হয়ে পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন তিন বার। একবার উপপ্রধানও। অন্য জন এলাকার দীর্ঘদিনের তৃণমূলকর্মী। প্রথম জন রাজ্যে বাম সরকারের পতনের পরেও দল ছাড়েননি। দ্বিতীয় জন মনোনয়পর্বের সময়েও দলের জন্য লড়ে গিয়েছেন। খয়রাশোলের লোকপুর পঞ্চায়েতের সেই প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রধান শেখ বুদরাইল দল বদলে ভিড়েছেন তৃণমূলে। এ বার তিনিই হয়েছেন গ্রামের পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূলের প্রার্থী। আর সক্রিয় তৃণমূলকর্মী সামসের আলি ওই একই আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা করেও দলের প্রতীক পাননি। ক্ষুব্ধ সামসের শেষ পর্যন্ত নির্দল হয়েই মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁরই দলের প্রার্থী শেখ বুদরাইলের বিরুদ্ধে। এমনকী ফব ছেড়ে তৃণমূল প্রার্থী হওয়া ‘বিশ্বাসঘাতক’ বুদরাইলকে হারাতে এককাট্টা ফব-সিপিএমকেও পাশে পেয়ে গিয়েছেন সামসের।
সমানে সমানে। যুযুধান দুই প্রার্থী শেখ বুদরাইল ও সামসের আলি। খয়রাশোলে তোলা নিজস্ব চিত্র।
যদিও দল ছাড়ার কোনও ইচ্ছা ছিল না বলে দাবি করছেন প্রৌঢ় শেখ বুদরাইল। তিনি বলেন, “দু’টি কারণে দল ছেড়েছি। প্রথমত, বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে মতের মিল হয়নি। ১১ আসনের পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি চাইলেও সিপিএম মানেনি। দ্বিতীয়ত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ এবং রাজ্যে যে দল ক্ষমতায় থাকবে সেই দলের সঙ্গে থাকলে তবেই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করি।” এলাকার প্রবীণ এই রাজনৈতিক কর্মী জোর গলায় বলছেন, “এত বছর বামফ্রন্টের শরিক দলে থেকেও এলাকার যে উন্নয়ন করতে চেয়েছিলাম, তা করতে পারিনি বলেই দল ছেড়েছি।”
তাঁর দেওয়া যুক্তি দিয়েই প্রাক্তন সহকর্মীকে কাটতে নেমেছে ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএম। এলাকার ফব বিধায়ক বিজয় বাগদির বক্তব্য, “উনি আসলে অসম্ভব ক্ষমতালোভী। একমাত্র সে কারণেই বামপন্থী দল ছেড়ে দক্ষিণপন্থী দলে যোগ দিয়েছেন।” পাল্টা বলেন, “এত দিন তো পঞ্চায়েত, জেলা ও রাজ্যে বামফ্রন্টই ক্ষমতায় ছিল। তাহলে তো তাঁর যুক্তি অনুযায়ী তিনি সহজেই এলাকার উন্নয়ন করতে পারতেন। করেননি কেন, এলাকাবাসী কিন্তু সেই প্রশ্ন তুলবেন।” কম যান না এলাকাকে হাতের তালুর মতো চেনা শেখ বুদরাইলও। বিরোধীদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে তাঁর প্রশ্ন, “কই আগে তো মনে হয়নি? আজ দল ছেড়েছি বলে আমি ক্ষমতা লোভী!”
এ দিকে দলের সিদ্ধান্তে ফুঁসছেন সামসের আলি। তাঁর ক্ষোভ, “ওই আসনে আমিই দলের প্রতীক পাব বলে ঠিক ছিল। তার বদলে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে টপকে আসা একটা লোক রাতারাতি টিকিট পেয়ে গেল!” এলাকার প্রকৃত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা দলের ওই সিদ্ধান্তকে ভাল চোখে নেননি বলেই তাঁর দাবি। “তাঁরা আমাকেই তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। তাই প্রতীক না পেয়েও নির্দল হয়েই লড়ব বলে ঠিক করি।” বলছেন সামসের আলি।
যদিও তাঁকে চেনেনই না বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “সামসের আলি নামে যে ব্যক্তি তাঁরই টিকিট পাওয়ার কথা ছিল বলে দাবি করছেন, সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।” মলয়বাবু বলেন, “যে কেউ নির্দল প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু ওই আসনে আমরাই জিতব। সিপিএম তাঁকে সমর্থন করলেও কিছু যায় আসে না।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, শুধু শেখ বুদরাইলই নন, খয়রাশোলের বহু ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা-কর্মী ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার আগেই তৃণমূলে যোগ দেন। শেখ বুদরাইল ওই এলাকায় দীর্ঘদিন মানুষের সঙ্গে কাজ করছেন বলে তাঁদের দল পঞ্চায়েতের একটি আসনে তাঁকেই প্রার্থী করেছে। তৃণমূল শেখ বুদরাইলকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেও শরিক দলের মতোই প্রাক্তন সহকর্মীকে একহাত নিয়েছে সিপিএমও।
সিপিএমের খয়রাশোল জোনাল সদস্য মহাবীর কর্মকারের অভিযোগ, “ওঁর বেশ কিছু কার্যলাপের জন্যই গত দু’টি ভোটে শরিক ফরওর্য়াড ব্লকের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়নি। এ বারও তাঁর বাধাতেই আসন রফা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়।” তাঁর ঘোষণা, “শেখ বুদরাইলের মতো ক্ষমতালোভীকে হারানোর জন্যই আমরা ওই আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করব।” সিপিএম বরাভয় দিলেও সেই নির্দল প্রার্থী কিন্তু নিজেকে ‘তৃণমূল’ প্রার্থী বলেই মনে করছেন। এক দিকে আত্মবিশ্বাসী সামসের আলি বলছেন, “এলাকায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী। আমাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে গেলে এত ঝামেলা করে জিততে হত না।” অন্য দিকে ফব ফেরত বুদরাইল শেখ বলছেন, “আমি বিশ্বাসঘাতক নই। সিপিএম আমাকে কাজ করতে দেয়নি। তাই এ বার তৃণমূলের হয়ে জিতেই লোকুপরে পরিবর্তন আনব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.