সংসদের আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি সংসদের দুই কক্ষে পাশ করিয়ে নিতে মরিয়া কেন্দ্র। তাই অধিবেশনের আগে ওই চুক্তি-বিরোধী দলগুলিকে বোঝানোর প্রবল চেষ্টা শুরু হয়েছে।
আগে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের ধারাবাহিক দৌত্যে কিছুটা জট কেটেছিল। প্রায় এক বছর ধরে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা দফায় দফায় বসেছিলেন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ এবং মূলত অসমের বিজেপি নেতৃত্বের বিদ্রোহে বিষয়টি বিশ বাঁও জলে চলে যায়। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। এই চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল-সহ নানা সমস্যার সমাধান করে ফেলা গেলে তা জাতীয় স্বার্থের পক্ষেও ভাল। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।
তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই চুক্তি হলে ভারতকে বেশি জমি দিয়ে দিতে হবে বলে যে ধারণা তৈরি হয়েছে তা সঠিক নয়। অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের দাবি, ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ৫১টি, যার এলাকা প্রায় ৭ হাজার একর। আর বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, যার জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার একর। ফলে সোজা হিসাবে এই ছিটমহল হস্তান্তর হলে ভারত পাবে ৭ হাজার একর, কিন্তু দিতে হবে ১৭ হাজার একর। এত ক্ষতি করে এই চুক্তির কোনও অর্থ হয় না।
এই ধারণার মোকাবিলায় একটি পুস্তিকা তৈরি করেছে বিদেশ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, খাতায় কলমে বেশি জমি বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সেটা নেহাতই খাতায় কলমে। বাস্তব পরিস্থিতি হল, ওই জমি কখনওই ভারতের ছিল না। ভারতীয় ছিটমহলগুলি বাংলাদেশের গভীরে। সেখানে কখনওই ভারত পা রাখেনি। সেটি কার্যত বাংলাদেশেরই দখলে থেকেছে। ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহলের ক্ষেত্রে আবার এর বিপরীত চিত্রটি সত্য। ফলে, বাস্তব পরিস্থিতিকেই বৈধতা দেবে স্থলসীমান্ত চুক্তি। ছিটমহল ছাড়াও দু’দেশের দখলে থাকা কিছু এলাকা বিনিময় হবে। সরকারি পরিভাষায় ওই এলাকার নাম “পরিপন্থী ভাবে দখলে থাকা এলাকা’। সেই এলাকার বিনিময়ের ক্ষেত্রে অসম আসলে বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০০ একর জমি ফেরত পাবে বলে দাবি বিদেশ মন্ত্রকের। |