ছাপ্পার নালিশ, বহু বুথেই
ফের ভোট চায় বিরোধীরা
ভোট ঘিরে গোলমাল ঢুকে পড়ল বুথের মধ্যেও। ব্যালট ছেঁড়া, পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল জেলার নানা প্রান্তে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার অভিযোগ করেন, জেলায় ৮৯০টি বুথে ‘রিগিং’ করেছে তৃণমূল। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো হলেও কোনও সাহায্য মেলেনি। ওই বুথগুলিতে তাঁরা পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন বলে জানান। জেলা কংগ্রেস (গ্রামীণ) সভাপতি আজিজুল হক মণ্ডলের অভিযোগ, “বর্ধমান শহর লাগোয়া ১১টি বুথ ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দখল করে তৃণমূল। সেগুলিতে আমরা পুনর্নির্বাচন চেয়েছি।”
বর্ধমান ১ ব্লকের সরাইটিকর পঞ্চায়েতের ৭২ নম্বর বুথে দেওয়ানদিঘির নিহত সিপিএম নেতা প্রদীপ তা’র মা ছায়ারানিদেবীর হাত থেকে ব্যালট কেড়ে তাতে ঘাসফুলে ছাপ দিয়ে ব্যালট বাক্সে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মন্তেশ্বরে পুঁড়শুড়ি পঞ্চায়েতে গিরিগড়নগর গ্রামে এক প্রাথমিক স্কুলে দুপুরে স্থানীয় সোনাডাঙা থেকে কিছু দুষ্কৃতী বুথে ঢুকে ব্যালট ছেঁড়ে ও নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। সেখানে তখনকার মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
কেতুগ্রামের একটি বুথে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নাকাদহ এলাকার একটি বুথেও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঢুকে ব্যালট বাক্স নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ করেন সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল। পরে সেটি সিল ভাঙা অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি। বিকেলে পিলায় পঞ্চায়েত সমিতির এক আসনে সিপিএম প্রার্থী মাসকুরা বিবির নামের বদলে অন্য এলাকার প্রার্থীর নাম দেখা যায়। সুব্রতবাবু বলেন, “দু’জায়গাতেই পুনর্নির্বাচনের আবেদন জানিয়েছি।”
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের চিনিসপুর গ্রামে রিগিংয়ের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ব্লক লাগোয়া নিরোল গ্রামেও বিকেলে বুথে ঢুকে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রামবাসীরা আটকে রাখেন। পরে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়। অভিযুক্তদের মোটরবাইকও ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রামে দিঘিরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টো বুথে কংগ্রেসের ৫০ জন ঢুকে ব্যালটে ছাপ মারে বলে অভিযোগ। কংগ্রেস অভিযোগ মানেনি। সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল সম্পাদক দুর্যোধন সরের দাবি, মঙ্গলকোটের ৮২টি বুথে এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়েছে তৃণমূল। একই অভিযোগ করেন কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। কাটোয়ার অর্জুনডিহি গ্রামে ৮৫ নম্বর বুথে আবার সিপিএমের বিরুদ্ধে ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভোট বন্ধ হয়ে যায়।
দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকারের অভিযোগ, “৭টি বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূল। তিন জায়গায় পুনর্নির্বাচন দাবি করেছি।” কাঁকসার আমলাজোড়ার বাবনাবেড়ায় সিপিএমের এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দুপুরে পানাগড় বাজার হিন্দি হাইস্কুলের দু’টি বুথে তৃণমূলের লোকজন ছাপ্পা মারে বলে অভিযোগ।
বারাবনির পানুড়িয়া পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর বুথেও ভোট বাতিল হয়েছে। বিডিও উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, দুপুরে এক দল লোক কিছু ব্যালট ছিনিয়ে ছিঁড়ে দেয়। ভোট বন্ধ করা হয়। মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সালানপুর ব্লকে ঘিয়াডোবার ৫৪ নম্বর বুথে কংগ্রেস প্রার্থী মিনতি নায়েক তাঁর এজেন্টের সঙ্গে কথা বলতে ঢুকলে পুলিশ তাঁকে বের করে দেয়। তবে কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী শ্যামল মণ্ডলের অভিযোগ, বিকেলে ঘিয়াডোবার ৫৫ নম্বর বুথে তৃণমূলের বহিরাগতেরা ছাপ্পা ভোট দেয়।
জামুড়িয়ার চিচুড়িয়ায় ৩৬ নম্বর বুথে দুপুরে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। অমিতাভবাবু বলেন, “প্রিসাইডিং অফিসার বিডিও-র কাছে গণ্ডগোলের অভিযোগ জানালে ওই বুথে ভোট বন্ধ করা হয়। সবিস্তার রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।” চিচুড়িয়ার সিদ্ধপুরে নির্দল প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগে ভোট বন্ধ থাকে। রতিবাটি পঞ্চায়েতে তিনটি বুথে কংগ্রেস প্রার্থীর এজেন্টদের, তিরাটে হাড়াভাঙায় সিপিএম ও কংগ্রেসের দুই এজেন্ট, পাণ্ডবেশ্বরে কেন্দ্রা পঞ্চায়েতে এক নকশাল প্রার্থী এবং হরিপুর ও খোট্টাডিহির চারটি বুথে কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টকে তৃণমূল বের করে দেয় বলে অভিযোগ।
সোমবার রাতে তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ ও জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরা অবশ্য বলেন, “রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ সত্যি হলে জেলার এত মানুষ কি ভোট দিতে পারতেন!” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “এ দিন বেশ কয়েকটি জায়গায় বুথ দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ছ’টি জায়গায় এর ফলে পুননির্বাচন হতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.