কোচবিহার রাজ্যের সঙ্গে বাংলা, ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগের জন্য মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর রেল সংযোগের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করায় ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল সেন্ট্রাল রেলওয়ের এজেন্ট মি. ফার্নিভাল একটি ন্যারো গেজ লাইনের পরিকল্পনা করে সরকারের কাছে পেশ করেন ও ১৮৯১-৯২ সালে সার্ভের কাজ শেষ হলে চিফ ইঞ্জিনিয়ার মি. ওয়ার্নফোর্ড নির্মাণকাজ শুরু করেন ও মালগাড়ি চলাচলের জন্য ১৮৯৩-এ ও যাত্রী-গাড়ি চলাচলে ১৮৯৪ সালের মার্চে কোচবিহার স্টেট রেলওয়ের ট্রেন পরিষেবা চালু হয় গীতালদহ, দেওয়ান হাট হয়ে তোর্সা স্টেশন পর্যন্ত। কোচবিহার শহরে ট্রেন চালু হয় ১৮৯৮-র ডিসেম্বরে। পরবর্তী কালে এ লাইন আলিপুরদুয়ার, রাজাভাতখাওয়া হয়ে জয়ন্তী স্টেশন পর্যন্ত চালু হয় ১৯০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এক সময় ব্রিটিশ সরকারকে লভ্যাংশের একটা অংশ স্টেটকে দিতে হত। |
যাত্রী ও মাল পরিবহণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় রেলে পরিচালনভার কোচবিহার স্টেট রেলওয়ে থেকে নিয়ে নেয় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে। ক্রমে ন্যারো গেজ থেকে মিটার গেজ হয় ১৯২৫ সালে। এক সময় গীতালদহ হয়ে অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় যাতায়াত করা যেত। পরিবর্তন আসে। দেশভাগ ইত্যাদি ঘটনায় ঐতিহ্যশালী কোচবিহার স্টেশন তার কৌলীন্য হারায়। স্টেশনে এখন একটাই লাইন। স্টেশনমাস্টার নেই, সিগন্যাল নেই, আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে বামনহাট স্টেশন এই ৭৩ কিমি লাইনে কোনও ট্রেন গেলে বিপরীত দিক থেকে ট্রেন আসতে পারবে না। লুপ লাইন কোনও স্টেশনে না থাকায় ক্রসিংও হয় না। অনেক স্টেশনে টিকিট কাটারও ব্যবস্থা নেই। সর্বত্র তাচ্ছিল্যের নিদর্শন। এক সময় শোনা গিয়েছিল এই লাইনটি উঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও করুণাবশত লাইনের কাজ শুরু হয়। স্টেশনগুলো সংক্ষিপ্ত সংস্করণে চালু হয়। শতাধিক বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ রেল স্টেশনে স্টেশন মাস্টার নেই। তাঁর অফিস ঘরে পুলিশ থাকেন। ভাবা যায়! নাগরিকরা আশা করেন রেল দফতর অবিলম্বে কোচবিহার-সহ অন্য স্টেশনে লুপ লাইনের ব্যবস্থা করুক। এতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। ক্রসিঙের সুবিধা হবে। এখন এই অপ্রতুল ট্রেন সংখ্যাতেও বিপুল যাত্রিপরিবহণ হয়। ট্রেন বাড়লে যাত্রিসংখ্যা যেমন বাড়বে মালগাড়ি চলাচলও করতে পারবে ও দূরপাল্লার ট্রেনের সুবিধে নাগালে আসবে।
নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, কোচবিহার
|
জলপাইগুড়ির ৩ নং রেলগুমটির যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। অথচ জলপাইগুড়ির ট্রাফিক পুলিশ দফতর যেন জেগেও ঘুমিয়ে আছে। যানজট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েই চলেছে। এর সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন, ট্রাফিক পুলিশ, পুরসভা যদি এগিয়ে না আসে তা হলে ৩ নম্বর গুমটির যাতায়াতের পথটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি একটি উড়ালপুলের, কিন্তু সরকার ও রেল দফতরের ঔদাসীন্যের কারণে প্রস্তাবটি বিশ বাঁও জলে। আগামী কয়েক বছরেও প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে মানুষদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমনকী ২০১৩-র ৩১ মে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ডাকা নাগরিক কনভেশনেও এই প্রতিবেদক বিষয়টি তাঁর সামনে তুলে ধরেছিলেন ও ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসনকেও এখানে ট্রাফিক পুলিশ নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন। অথচ করলা-তিস্তা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেলেও এলাকাবাসীদের এই দীর্ঘ দিনের সমস্যার আজও সুরাহা হল না। কর্তৃপক্ষকে জানাই এ ব্যাপারে একটু ভাবুন এবং সত্বর এর সমাধানে এগিয়ে এলে মানুষ উপকৃত হবেন।
অরবিন্দকুমার সেন, জলপাইগুড়ি |