গ্রামীণ হাসপাতালটি স্বাভাবিক শিশু প্রসবে জেলায় সেরার শিরোপা পেয়েছে। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তাকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ এই ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের জেনারেটার বিকল দু’সপ্তাহ ধরে। লোডশেডিংয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে, গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হচ্ছে প্রসূতি ও অন্য রোগীদের। অথচ বিকল জেনারেটার মেরামত নিয়ে ব্লক এহং জেলা স্বাস্থ্য দফতরে কাজিয়া চললেও মেরামতির উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০ জুন থেকে জেনারেটর বিকল হয়ে পড়ে। রাতে লোডশেডিংয়ে ভরসা মোমবাতির আলো আর হাত পাখা। অন্য রোগীদের থেকেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে প্রসূতিতে নিয়ে। প্রসবের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও সমস্যা পড়ছেন চিকিৎসক এবং নার্সেরা। দৈনিক গড়ে ৬৫ জন রোগী থাকেন হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে সবসময়ই কমবেশি ১৫ জন প্রসূতি থাকেন। রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, “প্রায় রাতে লোডশেডিং হচ্ছে। অসহ্য গরমে অনেকে কাহিল হয়ে পড়ছে। তার পরেই বিকল জেনারেটর কেন সারানো হচ্ছে না বোঝা যাচ্ছে না। ব্লকের স্বাস্থ্য কর্তারা কী করছেন বোঝা দায়।”
ময়নাগুড়ি ব্লক রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা আরএসপি’র বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছিল। এখনও কোনও লাভ হয়নি। গত শনিবার রাতে জেনারেটর ভাড়া করার কথা বলা হয়েছে বলে শুনেছি।” জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন। “আমাকে এই বিষয়ে আগে কেউ কিছু জানায়নি। বিষয়টি জানার পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।” তবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ বলেন, “উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি ও টেলিফোন করেছি। নির্দেশ না আসায় আমি কিছু করতে পারিনি।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ৮ জুলাই এবং ১২ জুলাই ব্লকের তরফে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে এই বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তার পরেই কেন জেলা সদর থেকে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হল না বা রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে একটি বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা করা কেন গেল না, প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয়রা।
জেনারেটার মেরামতকে ঘিরে এই চাপান-উতোরে বিরক্ত বাসিন্দাদের একাংশ। ময়নাগুড়ি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ঘোষাল বলেন, “ময়নাগুড়ি থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের দূরত্ব মাত্র ১৯ কিলোমিটার। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা কেন নিলেন না তা পরিস্কার নয়। রোগী কল্যাণ সমিতিও বৈঠক ডেকে ব্যবস্থা নিতে পারত। সেখানে ভোটের বিধিনিষেধের কথা বলা হচ্ছে।” এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “এটা জরুরি পরিষেবা। মিটিং করে ব্যবস্থা নেওয়াই যেতে পারে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ২০০১ সালে জেনারেটর বসানো হয়। জলপাইগুড়ির এক এজেন্সিকে জেনারেটার চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৬ সাল থেকে জেনারেটারে সমস্যা চলছে। এজেন্সিটি সেই সময় এক দফায় তা ঠিকঠাক করতে না পেরে নির্মাতা সংস্থাকে নিয়েই কাজ করাতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। তার পরে যথাসময়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই প্রশ্নই উঠেছে। |