হাতিকে জঙ্গলে রাখতে গাছ লাগাচ্ছে বন দফতর
লোকালয়ে হাতির হানা এড়াতে জঙ্গলের যে পথ দিয়ে হাতির দল যাতায়াত করে, সেখানে আরও বেশি সংখ্যক শাল, মহুয়া, অর্জুন প্রভৃতি গাছ লাগানো শুরু করেছে বন দফতর। উদ্দেশ্য, জঙ্গলের ওই অংশকে হাতির বসবাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। আমলাগোড়া, হুমগড়-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে তা শুরু হয়েছে। বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “প্রতি বছর দলমা থেকে হাতির দল জেলায় আসে। জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট পথ দিয়ে তারা যাতায়াত করে। যাতায়াতের পথে হামেশাই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতিরা। খেতের ফসল তছনছ করে, ঘরবাড়ি ভাঙে। তাই বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে হাতির দলকে যদি জঙ্গলেই আটকে রাখা যায়, তা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে।”
প্রতি বছর বর্ষায় জঙ্গলে নতুন গাছ লাগানো হয়। এ বারও হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, দফতরের রূপনারায়ণ বিভাগের অন্তর্গত ৯০ হেক্টর এলাকায় শালগাছের চারা লাগানো হবে। এক হেক্টর জমিতে ১৬০০ চারা লাগানো যায়। সেই মতো নতুন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার চারা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। খড়্গপুর বিভাগের অন্তর্গত ৩৮৫ হেক্টর এলাকায় শাল, মহুয়া, অর্জুন গাছে চারা লাগানো হবে। সেখানে ৬ লক্ষ ১৬ হাজার চারা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “হাতির দলকে জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখা গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমবে। শাল, মহুয়া, অর্জুন গাছ লাগিয়ে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।” একই বক্তব্য খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহর। তাঁর কথায়, “জঙ্গলের মধ্যে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে তখন হাতি জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসবে না।”
প্রতি বছরই দলমার হাতির দল পশ্চিম মেদিনীপুরে আসে। যাতায়াতের পথে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল নষ্ট করে। ক্ষতিপূরণের অর্থ জোগাতে হিমসিম খেতে হয় দফতরকে। এ বারও ১৩০-১৪০টি হাতির দল জেলার বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করেছে। জেলার জঙ্গলমহলের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস। কিন্তু, এই গাছগুলো হাতির বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। কোথায় কোথায় শাল, মহুয়ার দেখা মেলে। ফলে, জঙ্গলের মধ্যে খাবারের সঙ্কট দেখা দেয়। মূলত, খাদ্যের খোঁজেই হাতির দল জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে মাঠে। সাবাড় করে জমির ধান। বন দফতরের দাবি, হাতির দলকে জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখতে জঙ্গলের ধারে পরিখা তৈরি করা হয়েছে। কাঁটাগাছ, বৈদ্যুতিক তারও দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিশেষ হেরফের হয়নি। এ দিকে, যত দিন যাচ্ছে, হাতির দল ততই নতুন নতুন এলাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। পরিবর্তন আসছে তাদের খাদ্যের অভ্যাসেও।
বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “হাতির দলকে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাতে যথেষ্ট খাবার প্রয়োজন। তাই হাতির খাবার উপযোগী গাছ লাগানো জরুরি।” এক সময়ে দাবি উঠেছিল, দলমা থেকে আসা হাতির দলকে সীমান্তেই আটকে দিতে হবে। তা নিয়ে আন্দোলনও হয়। তখন সরকার ময়ূরঝর্নায় একটি প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেখানে হাতির খাওয়ার উপযোগী গাছ লাগানো হবে, পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্ত প্রকল্প সে ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে, ফি বছর দলমা থেকে হাতির দল আসছে। বাড়ছে হাতির সংখ্যাও। সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি। বন দফতর সূত্রে খবর, দলমা থেকে হাতির দল আসা শুরু হয়েছিল আশির দশকে। তখন ৬-৭টি করে হাতি আসত। দলটি ছড়িয়েও পড়ত না। মূলত, ঝাড়গ্রাম এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকত। কখন কখনও লালগড়ের কাছাকাছি আসত। আর এখন সেখানে দলে ১৩০-১৪০টি হাতি থাকে। দলমা থেকে হাতির দল আসে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে। বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়ানোর পর এপ্রিল-মে মাসে ফিরে যায়। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “ পর্যাপ্ত খাবার থাকলে তখন হাতি আর লোকালয়ে ঢুকবে না। হাতির দল জেলায় এসে যে পথ দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানে সেই পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।”

হাতির হানায় বছরে ক্ষতি
মৃত্যু গড়ে ১১ জনের
জখম গড়ে ১৫ জন
শস্যহানি ১ হাজার হেক্টরে


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.