|
|
|
|
শরীর-মনের পলিশ
কখনও টেনশন। কখনও চড়া রোদে পোড়া। ফল— ঝলসানো ত্বক।
মন আর ত্বকের জেল্লা ফেরাতে রূপটানের নতুন হুজুগ। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় |
সচ্ছল উচ্চবিত্ত থেকে খাঁটি মধ্যবিত্ত। সেলেবদের ঝাঁ-চকচক শরীরের মতো শরীর পেতে দেদার খরচে করতে রাজি তাঁরাও।
গৃহবধূ অনন্যার কথাই ধরা যাক না, তিনি আপ্লুত হয়ে বললেন, “এক ধরনের ম্যাজিক আছে এই বডি পলিশিংয়ে। আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে। যে যার জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। এক বান্ধবীর আবদারে প্রথম পার্লারে গিয়ে বডি পলিশিং করাই। সেদিন খুব আরাম পেয়েছিলাম। আমার একলা থাকার মনখারাপ কাটিয়ে দিয়েছিল এই বডি পলিশিং। এখন যখনই খুব একা লাগে, মন ভাল লাগে না, পার্লারে বডি পলিশ করাতে যাই। সঙ্গে সঙ্গে মনখারাপ ভুলে নতুন আনন্দ পেয়ে যাই। এটা ম্যাজিক ছাড়া আর কি? আর নিজেকে প্যাম্পার করতে কার না ভাল লাগে? বরের টাকায় নিজের মাসিক কেনাকাটার খরচ কমিয়ে এখন বডি পলিশিংয়ের জন্যে টাকা রাখি।”
চাকরিজীবী স্টাইলিশ মহিলারা সকলেই এখন মেতেছেন বডি পলিশের নেশায়। পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে চেহারা নিয়েই কাজের জগতে তাঁরা ঘোরাফেরা করতে চান। পিছিয়ে নেই জেন ওয়াইয়ের দলও। “বাবার অফিস ট্যুরে বেড়াতে গিয়ে প্রথম বডি পলিশিং করাই। কেরলে একটা রিসর্টে অপশন ছিল বডি পলিশিংয়ের। পরে কলকাতায় এসে বাবাকে ম্যানেজ করে দেড়মাস অন্তর একটা পার্লারে গিয়ে বডি পলিশ করাই। আসলে এখন তো কার্ভি লুকসের কদর। বডি পলিশিং মেদ কমাতেও সাহায্য করে। শরীরের সুন্দর গঠন তৈরি হয়। বডি পলিশিং ছাড়া কোনও ভাবেই মসৃণ ত্বক সম্ভব নয়,” যাদবপুরের ইংরেজির ছাত্রী কমলিকা বাবার খরচে বডি পলিশিং করালেও জানালেন, ওটা এখন ধার হিসেবেই তিনি নিচ্ছেন। চাকরি পেলে শোধ করে দেবেন।
ব্যাপারটা কী
শরীরের একেক জায়গায় ত্বকের রং একেক রকম—এই ধারণা এখন ব্যাকডেটেড। মেক আপ লাগিয়ে সব সময় রঙের ভারসাম্য আনা সম্ভব নয়। শরীরের সর্বত্র চাই এক রং। তাই ত্বকচর্চার নতুন হুজুগ এখন বডি পলিশিং। সোজা কথায় শরীর ঘষামাজা। মানসিক চাপ, দূষণ, কাজের চাপ কেবল মনই নয়, শরীরকেও ম্লান করে। ক্লান্ত ত্বক, ছোপ-দাগওয়ালা পায়ের তলা, হাতের কনুই, ঘাড়ের কালচে ভাঁজ নিয়ে আর যাই হোক আত্মবিশ্বাসের আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। আর মন যদি ফুরফুরে না থাকে, তো সংসার থেকে অফিস থেকে আড্ডা সবই যে মাটি।
আজকের ওয়েট ম্যানিয়ার কথা মাথায় রেখে আর এক রূপচর্চা সংস্থার স্কিন অ্যান্ড স্পা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সোনালি দে জানালেন, “বডি পলিশিং সব সময়ই প্রকৃতি থেকে পাওয়া জিনিসপত্র দিয়ে হয়। এতেও কিছু পরিমাণ ফ্যাট কমে। আমরা কোনও যন্ত্রের ব্যবহারও করি না।”
আসলে এখন মিডিয়ার যুগ, সিনেমা থেকে ছোট পর্দায় অভিনেতা, অভিনেত্রীদের খোলামেলা পোশাক দেখে তা সকলেই পরতে চান। কিন্তু এই খোলামেলা পোশাকের জন্যে শরীরের যে অংশগুলো বেরিয়ে থাকে সেগুলো যাতে ঝলমলে দেখায় সেই জন্যেই বডি পলিশিং আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। পিঠ খোলা চোলিতে পিঠটাই যদি অ্যাট্রাকটিভ না হয় তবে পিঠ খোলা রেখে কী হবে? সোনালি আরও জানালেন, ‘‘নিজের ত্বক অনুসারে বডি পলিশিং পদ্ধতি নির্বাচন করা উচিত নয়তো শরীরে র্যাশ, অ্যালার্জির মতো নানা সমস্যা দেখা দেবে। যিনি বডি পলিশিং করছেন তাঁকে খুলে বলতে হবে ত্বকের প্রকৃতিটা ঠিক কেমন?”
|
কোন ত্বকে কেমন পলিশ |
শুষ্ক ত্বক
এই ধরনের ত্বকের জন্যে খুব উপকারী ব্রাউন সুগার পলিশ, যা একসঙ্গে ময়শ্চারাইজিং এবং স্ক্রাবিংয়ের কাজ করে। আর চন্দন, গোলাপ গন্ধের অ্যারোমা অয়েল শরীরকে ঝরঝরে করে তোলে।
তৈলাক্ত ত্বক
এ ক্ষেত্রে স্ক্রাবিঙের জন্যে সি সল্ট ব্যবহার করতে হবে। সি সল্টের পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড শরীরের ভিতরকার মরা কোষ ঝরিয়ে শরীরের বয়স কমিয়ে লাবণ্য বাড়াবে। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত লেমন বা টি ট্রি অয়েল শরীরকে জীবাণুমুক্ত করবে।
সাধারণ ত্বক
কফির দানা, কলা, পেঁপে, আনারসের প্যাক দিয়ে, অর্থাৎ নানা ফলের ওপর নির্ভর করেই এই ধরনের ত্বকে বডি পলিশ করা হয়। “ত্বক পলিশের ক্ষেত্রে ফ্রুট অ্যাসিডের মতো উপকারী আর কিছু হতে পারে না,” জানালেন মৌসুমী। এর সঙ্গে অ্যাভোকাডো, গ্রেপ সিড অয়েল দিয়ে ম্যাসাজটা করা হয়।
|
বাড়িতে বডি পলিশ |
মৌসুমী জানাচ্ছেন বডি পলিশিংয়ের খরচ তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। তবে প্রতি সপ্তাহে না করে তা মাসে একবার করলেই চলবে। খরচ কমাতে চাইলে স্ক্রাবিং বা ম্যাসাজ ক্লিনিং এভাবে আলাদা করেও করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতি ধাপের খরচ হাজার টাকা।
খরচ আরও কমাতে চাইলে বাড়িতে নিয়মিত বডি পলিশিংয়ের রুটিন তৈরি করা যায়। যেমন করেন অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। “ টিং-এর চাপে পার্লারে নিয়মিত যাওয়া হয়ে ওঠে না আমার। তাই ঘরোয়া পদ্ধতির ওপর আমি অনেক বেশি নির্ভর করি। তবে শ্যুটিংয়ের ক্লান্তি কাটাতে, নিজেকে ঝরঝরে করতে বডি পলিশিং এখন আমার কাছে রুটিন জব,” জানালেন তনুশ্রী।
ওটমিল স্ক্রাব, দই, মধু, বেসন, চিনি গুঁড়ো, চাল গুঁড়ো, এই ধরনের সহজলভ্য উপাদান দিয়ে স্নানের আগে বডি ম্যাসাজ ও স্ক্রাবিং করা যায়।
তিন চামচ ওটমিল, তিন চামচ ব্রাউন সুগার আর তিন চামচ অলিভ অয়েলকে ফুটিয়ে নিয়ে মিশ্রণ হিসেবে তৈরি করে ম্যাসাজ করলেও তা খানিকটা বডি পলিশিংয়ের কাজ করে। কোনও কোনও স্যালোনে ব্রাইডাল প্যাকেজে বডি পলিশিং করানো হয়। “সেই জন্যেই বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পরেই বডি পলিশিংয়ের জন্যে বুকিং করিয়েছি আমি,” জানালেন সমর্পিতা। আগামী বছরের গোড়ায় ওঁর বিয়ে। পাল্টে যাচ্ছে ভাল থাকার সংজ্ঞা। ভাল থাকা মানে যেমন একলা ঘরের বই তেমনি ভাল থাকা মানে নিজের শরীরের সঙ্গে নিজের মনের খেলা। এই শরীর আর মনকে একসঙ্গে জাগিয়ে তুলতেই বডি পলিশিংয়ের এত রমরমা। এখন নিজেকে পালিশ করা নতুন আলোয় চিনতে চাইছেন সব মেয়েই।
|
পলিশে মন তরতাজা হয় |
• সমুদ্রে বেড়াতে গেলে শরীর পুড়ে যায়। ফিরে এসে তিন সিটিংয়ে বডি পলিশ করালে শরীরের স্বাভাবিক রং ফিরে আসে। প্রতি সিটিংয়ে খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা। যাঁরা বাইরে ঘুরে রোদে পুড়ে কাজ করেন তাঁদের শরীরের জন্য একই কারণে বডি পলিশিং খুব ভাল কাজ করে।
• শরীরের স্ট্রেচ মার্ক নিয়মিত বডি পলিশিংয়ে মুছে যায়। ত্বক তাতে কমনীয় হয় এবং শরীরের দাগ মেটাতে সাহায্য করে।
• মন আরও জীবন্ত আর তরতাজা হয়। মানুষের মনে আজকের এই চাপের জীবনে অবসাদ বা ক্লান্তি আসতেই পারে। বডি পলিশ করালে মন ফুরফুরে হয়।
• শরীরে লাবণ্য আনার জন্য গোল্ড পলিশিং অত্যন্ত জরুরি।
• বডিশপে না গিয়ে বাড়িতেও নিয়মিত পলিশ করানো যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে মধু, দুধের সর, কাঁচা টমেটো বডি ম্যাসাজের জন্য ব্যবহার করতে হবে। |
পরামর্শ: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|
|