ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এক দিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন বাবা। আর পাশে বসে বাবাকে গল্প শোনাতে ব্যস্ত ছিল ছোট্ট ক্যাথরিন। বই না খুলেই। গল্পটা একটা বাচ্চা ছেলের। মন থেকে ছেলে হলেও যার শরীরটা মেয়েদের। আর এ নিয়ে দুঃখের শেষ ছিল না তার।
আরও কয়েক বছর আগের কথা। ক্যাথরিন তখন সবে দু’বছরের। জিন আর স্টিফেনের সংসারে সেই সময় থেকেই নিত্য অশান্তি। ওই বয়সেই ক্যাথরিনের হাবভাব যেন কেমন অন্য রকম। বড় বোনের এত পুতুল, কই একদিনও খেলে না। জামাকাপড় থেকে চুলের ছাঁট, সব কিছু নিয়েই তর্ক জুড়ে দেয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। এমনকী তাকে মেয়ে বলে ডাকলেও তার ঘোরতর আপত্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, এই ছেলে-ছেলে ভাবটাও বাড়ে পাল্লা দিয়ে। আর এ সবের পাল্লায় পড়ে কোথায় হারিয়ে গেল হাসিখুশি, ফুটফুটে এই একরত্তি।
একরাশ হতাশা আর বিরক্তিতে মেয়েকে হারিয়ে যেতে দেখে আর সময় নষ্ট করেননি বাবা-মা জিন আর স্টিফেন। ক্যাথরিনকে নিয়ে সোজা যান মনোবিদের কাছে। যা আশঙ্কা করেছিলেন ঠিক তাই। ক্যাথরিনকে দেখে চিকিৎসক জানালেন তার ‘জেন্ডার ডায়াসফোরিয়া’ রয়েছে। মেয়ের শরীরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে রূপান্তরকামী পুরুষ।
কী এই ‘জেন্ডার ডায়াসফোরিয়া’? মার্কিন মনোবিদদের সংগঠন ‘ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার’-এর মতে, যে সব মানুষের এটা থাকে, নিজের লিঙ্গ নিয়ে তীব্র হতাশা গ্রাস করে তাঁদের। একই সঙ্গে থাকে অন্য লিঙ্গের মানুষ হয়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছে।
এখন ছয়ের গন্ডি ছুঁয়েছে ক্যাথরিন। না, ক্যাথরিন নয়, টাইলার। নামটাই যে পাল্টে ফেলেছে সে। তার আট বছর বয়সি দিদি অনায়াসেই ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ক্লাসের বন্ধুদের। ‘‘ও যে রকম থাকতে চায়, ইচ্ছে মতোই থাকুক’’ আর আপত্তি করেননি জিন-স্টিফেন।
কিন্তু এত কম বয়সে রূপান্তরকামী বলে আলাদা করে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। মনোবিদ প্যাট্রিক কেলির মতে, আমাদের লিঙ্গ সচেতনতা তৈরি হয় তিন থেকে ছ’বছর বয়সের মধ্যেই। তাই মেয়েরা পুতুল নিয়ে মেতে ওঠে, ছেলেরা মজে খেলনা গাড়ি বা স্পাইডারম্যানে। ফলে টাইলারের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়, দাবি তাঁর।
শিশুদের লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি আমেরিকায় স্বীকৃত হয়েছে হালফিলে। তাই স্কুলে এখন ছেলে হিসেবেই নাম লিখিয়েছে টাইলার। ঘরও সেজে উঠেছে পছন্দের স্পাইডারম্যান থিমে। কিন্তু বড় হয়ে টাইলার যদি আবার নারীসত্তা ফিরে পেতে চায়? এখনই অতশত ভাবতে রাজি নন তার মা-বাবা। ছেলের সিদ্ধান্তে পাশে থাকবেন তাঁরা জানিয়েছেন জিন। আর ক্যাথরিন? সে তো কবেই হারিয়ে গিয়েছে। টাইলারের নতুন পরিচয়ের আড়ালে। |