সিপিআইয়ের পথসভার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। হঠাৎ সেখানে একদল তৃণমূল কর্মী হামলা চালিয়ে মারধর করে সভা ভণ্ডুল করে দেয় বলে অভিযোগ। কোথাও আবার কংগ্রেসের পথসভা চলাকালীন পাশেই তারস্বরে মাইক বাজিয়ে পাল্টা স্লোগান দিয়ে সভা পণ্ড করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন শনিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন ভাবেই বিরোধীদের প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। আবার বর্ধমানের জামুড়িয়ায় শুক্রবার রাতে সিপিএমের ছোড়া বোমার আঘাতে এক তৃণমূলকর্মীর স্ত্রী জখম হন বলে অভিযোগ।
এ দিন পাঁশকুড়া ব্লকের হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথচক বাজারে সিপিআইয়ের পথসভা ছিল। প্রস্তুতির শেষ পর্বে তৃণমূলের কর্মীরা চড়াও হন। অভিযোগ, সিপিআই কর্মী নিরঞ্জন ভৌমিককে মারধর করে সভা ভণ্ডুল করে দেয়। এ দিন সকালে তমলুকের নন্দকুমার ব্লকের ব্যবত্তারহাটে কংগ্রেসের পথসভা চলাকালীন কাছেই মাইক বাজিয়ে সভা পণ্ড করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস কর্মীরা কিছুক্ষণ হলদিয়া-মেচেদা সড়ক অবরোধ করেন।
হিংসা ছড়িয়েছে জেলার অন্যত্রও। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাঙাবেড়ায় শনিবার রাতে কংগ্রেস কর্মী পিন্টু জানা ও তাঁর স্ত্রী অসীমা জানাকে মারধর করে তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোয় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের। মিছিল করে তৃণমূল কর্মীরা এ দিন দুপুরে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের জইনপুরে সিপিএম প্রার্থী শেখ শাহ আলমের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পটাশপুর ২ ব্লকের মংরাজ গ্রামে তাঁদের এক দলীয় কর্মীকে তৃণমূল মারধর করে বলে সিপিএমের দাবি। এগরা ২ ব্লকের বাথুয়াড়িতে তিন সিপিএম কর্মীকে বেঁধে মারধর করার খবরও এসেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের সঙ্গে সোমবার ভোট রয়েছে হুগলি ও বর্ধমান জেলায়। শনিবার সন্ধ্যায় পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়ায় তৃণমূলের কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে এক তৃণমূল প্রার্থীকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল এক নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে। পরেশ খাঁড়া নামে ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি বৈকুণ্ঠপুরে। শনিবার রাতে অন্ডালের পলাশবনে এক তৃণমূলকর্মীর গলায় খুর চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএনের বিরুদ্ধে। এ দিনই দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার সগড়ভাঙ্গায় সিপিএমের বড়জোড়া লোকাল কমিটির সদস্য সনাতন পালকে মারধর করা হয়। দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি ভর্তি। বুদবুদের রঘুনাথপুরে শুক্রবার রাতে সিপিএমের সভায় হামলা হয়। মারধর, সিপিএমের পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সেই শাসকদলই।
হামলায় নাম জড়িয়েছে সিপিএমেরও। জামুড়িয়ার মধুডাঙায় শুক্রবার রাতে তৃণমূল কর্মী বিশু বাউড়ির বাড়িতে বোমা ছোড়ার অভিযোগ হয়েছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। বোমার আঘাতে বিশুবাবুর স্ত্রী আরতী বাউড়ি আহত হন। আসানসোল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। রানিগঞ্জের নিমচা কোলিয়ারি এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থী হৈমন্তী মাহাতোর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতের রামনগর ভুইয়াধাওড়ায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে দলের এক কর্মীকে মারধর করে শূন্যে গুলি ছুড়ে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ করেছে সিপিআই (এমএল)। শনিবার তাঁরা বিডিও ও থানার ওসি-র কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। পুলিশকে ব্যবহার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগে এ দিন অন্ডাল থানায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
প্রথম দফায় ভোট হয়ে যাওয়া বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও হানাহানি জারি রয়েছে। শুক্রবার ইন্দাসের বেতানলে সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন জখম হন। ৫ তৃণমূল কর্মীকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সদস্য জগবন্ধু মণ্ডল-সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হলে তিন দিনের জেল হাজত হয়। বড়জোড়ার সাহারজোড়ায় তৃণমূলের হামলায় আহত হন এক সিপিএম কর্মী। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় দাঁতন ১ ব্লকের মহেশপুরে এক তৃণমূলকর্মীকে মারধরের অভিযোগে তিন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্য দিকে, চকইসমাইলপুর পঞ্চায়েত এলাকার জানাদিঘি গ্রামে সিপিএমকে ভোট দেওয়ার ‘অপরাধে’ ছয় সিপিএম সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূল। আহত হন এক মহিলা। আঙ্গুয়া গ্রামের মন্দিরতলায় সিপিএম-তৃণমূলে সংঘর্ষ হয়। কয়েকজন আহত হন। দাঁতন ২ ব্লকের টিটিয়া ও কুসুমদা গ্রামেও হামলার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের অভিযোগ, মোহনপুর ব্লকে রাতে তৃণমূলের বাইকবাহিনী আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। |