বেলঘরিয়ায় নজরে ভাড়াটেরা
মদন বললেন মাওবাদী-ঘাঁটি, পুলিশ জানে না
কামদুনির পর এ বার বেলঘরিয়া। মাওবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে এ বার কলকাতার নিকটবর্তী এই অঞ্চলেরও নাম করলেন রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী। কামদুনিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে মাওবাদীদের উপস্থিতির কথা বলেছিলেন। শনিবার মহাকরণে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বেলঘরিয়া থেকেই মাওবাদীরা মহাকরণ-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে হামলার ছক কষছে।” আর সেই মাওবাদীদের মোকাবিলায় তিনি স্থানীয় ক্লাব ও বাসিন্দাদের নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ‘হিংসা ও সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি’ গড়ছেন। শুধু তাই নয়, কামদুনিতে মাওবাদীদের যাতায়াতের প্রসঙ্গ টেনে এ দিন বেলঘরিয়াতে মাওবাদী-সিপিএম যোগসাজসের অভিযোগও করেছেন তিনি। যদিও পুলিশের দাবি, মন্ত্রী বললেও এমন কোনও খবর তাদের কাছে নেই।
কী বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী?
মদনবাবু জানান, প্রতি দিন বিকেলে বেলঘরিয়া স্টেশন চত্বরে মাওবাদীরা জড়ো হচ্ছে। বৈঠক করার পর সেখান থেকে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে তারা। মদনবাবু বলেন, “বেলঘরিয়া স্টেশন এলাকায় অনেক অপরিচিত মুখ দেখা যাচ্ছে। এদের অনেকেই প্রাক্তন নকশাল। অনেকের বিরুদ্ধে খুন, রাহাজানির মামলা রয়েছে।” মন্ত্রীর দাবি, পুলিশকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। ব্যারাকপুরের ডিসি (সদর) কল্লোল গনাই বলেন, “আমার এমন কোনও তথ্য জানা নেই।” বেলঘরিয়ায় মাওবাদী ঘাঁটি নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে খবর না থাকলেও মদনবাবু কিন্তু বেলঘরিয়ায় মাওবাদী ঘাঁটি নিয়ে নিজের যুক্তি সাজান। ওই এলাকায় পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকা বাইরের লোকেদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি। এমনকী এলাকার মেসবাড়িগুলিও তাঁর মতে সন্দেহজনক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেলঘরিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর মেসবাড়ি। বহু মানুষ এখানে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন। তাঁদের মতে, জেলা, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে যোগাযোগের সুবিধার জন্যই বহিরাগতরা থাকার জন্য বেলঘরিয়াকে পছন্দ করেন।
মদনবাবুও মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা পেতেই মাওবাদীরা ওই এলাকার ঘাঁটি গাড়ছে। তিনি বলেন, “বেলঘরিয়ার আদর্শনগর, নন্দননগরের মতো এলাকায় হাজার পাঁচেক পেয়িং গেস্ট থাকেন। অনেকেই অপরিচিত।” মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অপরিচিত ভাড়াটেদের ঠেকাতেই তিনি কাল, সোমবার থেকে ওই এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচারে নামবেন। মদনবাবু জানান, ‘হিংসা ও সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি’ ওই বহিরাগতদের ওপর নজরদারি চালাবে। ভাড়া নেওয়ার আগে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর-সহ নানা তথ্য দিয়ে ভাড়াটেকে একটি ফর্মও পূরণ করতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, মন্ত্রী মদনবাবু মাওবাদী যোগের এত খবর জানতে পারলেও পুলিশের কাছে কেন কোনও তথ্য নেই? কেনই বা মাওবাদীদের প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রশাসনের বদলে স্থানীয় ক্লাব ও বাসিন্দাদের নিয়ে গড়া কমিটির হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনি?
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র ওই এলাকায় তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে খুশি ছিলেন না। তার কারণ, ওয়ার্ড কমিটির নেতারা বেশির ভাগই পরিবহণমন্ত্রীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ নিয়ে দলীয় স্তরে বিস্তর টানাপোড়েনের পরে জুন মাসে কামারহাটি বিধানসভা এলাকার ওয়ার্ড কমিটিগুলি ভেঙে দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রের মতে, ‘হিংসা ও সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি’র নামে নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের দিয়ে ব-কলমে সেই ওয়ার্ড কমিটিগুলিকেই চালাতে চাইছেন মদন মিত্র।
পরিবহণ মন্ত্রীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তবে এই এলাকার তৃণমূলের আর একটি অংশের দাবি, ওয়ার্ড কমিটিগুলির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দলবিরোধী কাজের অভিযোগ ছিল বলেই সেগুলিকে ভেঙে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও যোগ নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.