|
|
|
|
দাসপুরে কাঠগড়ায় তৃণমূল |
হামলা হলে পুলিশ নিধিরামই, শিক্ষা কমিশনের |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • দাসপুর |
খাবারের গ্রাসটা তখনও ভাল করে চিবোননি প্রিসাইডিং অফিসার। আচমকাই তাঁর উপরে চড়াও হল জনা তিরিশেক লোক। কারও কোমরে, কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তারাই বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার লুঠ করে, ব্যালট বাক্স তুলে নিয়ে গেল। কিন্তু গোটা ঘটনা তাকিয়ে দেখা ছাড়া তাঁর বিশেষ কিছু করার ছিল না বলে মেনে নিচ্ছেন বুথের পাহারায় থাকা ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেলধারী পুলিশকর্মী। প্রিসাইডিং অফিসারকে বাঁচাতে গিয়ে মার খান তিনি। ঘটনা জেনে ভোটের কাজে যাওয়া রাজ্য পুলিশের অনেকেই বলছেন, “আমাদের হাতে থাকে মান্ধাতার আমলের রাইফেল। হামলাকারীরা আসছে নাইন এমএম পিস্তল থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু নিয়ে। রাইফেল থাকলেও লোকটা কী করত?”
বৃহস্পতিবার, পঞ্চায়েত ভোটের প্রথম দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের একটি বুথের এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, নাম কা ওয়াস্তের সশস্ত্র রক্ষী দিয়ে এ ভাবেই কি পরিচালিত হবে আগামী পর্বগুলোর ভোটও?
শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “পর্যবেক্ষক, সংশ্লিষ্ট মহলের রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী ১৮ জুলাই ওই বুথে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” হামলাকারীদের মুখে পাহারাদার পুলিশের অসহায়তার কথাও মেনে নিয়েছেন তাপসবাবু। তাঁর বক্তব্য, “দুষ্কৃতীরা শুধু ব্যালট পেপার বা ব্যালটবাক্স নিয়ে পালিয়েছে তাই নয়, বুথের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকেও মারধর করেছে। যেহেতু বুথে মাত্র দু’জন পুলিশকর্মী ছিলেন এবং দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল, তাই তাঁরা কিছু করতে পারেননি। এই ঘটনা থেকে কমিশন শিক্ষা নিচ্ছে।”
ঠিক কী হয়েছিল দাসপুর-১ ব্লকের ১৪৪/২ বুথে?
ভোটের দিন বুথে হামলা চালিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার দিব্যেন্দু মণ্ডলকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। কেড়ে নেওয়া হয় ব্যালট পেপার। সেই রাতেই জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণা দোলইয়ের পোলিং এজেন্ট তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা কমল চৌধুরী-সহ ৩০ জনের নামে মারধর এবং ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন দিব্যেন্দুবাবু। তার ভিত্তিতে কমল-সহ ৭ জনকে ধরেছে পুলিশ। ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব সামলানো পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার দিব্যেন্দুবাবুর অভিযোগ, “ভোট শুরুর পর থেকেই তৃণমূল প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট-সহ বেশ কয়েক জন সরাসরি ছাপ্পা দিতে চেয়েছিলেন। আমি আমল দিইনি। বেলা ১২টা নাগাদ বুথে কোনও ভোটার ছিল না। আমি তাই খেতে বাইরে যাই। তখন আচমকাই আমাকে জনা তিরিশেক লোক মারতে শুরু করে।” রেহাই পাননি ওই বুথে পাহারায় থাকা রাজ্য পুলিশের কর্মী পঙ্কজ ওঝা। এ দিন তিনি বলেন, “প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করছে দেখে আমি তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করি। তখন আমিও মার খাই।” ওই বুথে পাহারায় থাকা অন্য পুলিশকর্মীর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত বলে মানতে রাজি নন। দলের দাসপুর-১ ব্লক সভাপতি সুকুমার পাত্র বলেন, “মারধরের ঘটনা ঠিক। তবে এর সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়।”
আগামী পর্বের ভোটে তো বাড়তি নিরাপত্তা থাকছে না, তা হলে দাসপুরের পুনরাবৃত্তি আটকানো যাবে কী করে?
কমিশনের বক্তব্য, মাওবাদী এলাকা হওয়ায় জঙ্গলমহলের বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়েছিল। পরের দফায় সেই সমস্যা থাকবে না। ফলে, আরও বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যাবে। কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ভরসা রাখলেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোটের কাজে যাওয়া পুলিশকর্মী ও ভোটকর্মীরা। জঙ্গলমহলের ভোট সেরে দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামে ভোটের ডিউটিতে যাওয়া এক পুলিশকর্মীর কথায়, “সব বুথে তো আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা থাকবে না। তারা টহলও দেবে কিছুক্ষণ বাদে বাদে। সেই ফাঁকে কেউ হামলা করলে আমরা রুখব কী করে?” |
|
|
|
|
|