|
|
|
|
সেচের হাল ফেরেনি নন্দীগ্রামে |
রক্ত ঝরিয়ে রক্ষা করা জমি আজও একফসলি |
আনন্দ মণ্ডল • নন্দীগ্রাম |
শিল্পায়নের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে কৃষিজমি রক্ষা হয়েছে। কিন্তু জমিরক্ষা আন্দোলনের আঁতুড়ঘর পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে অধিকাংশ জমিই এখনও একফসলি।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি-আন্দোলনের সূত্রেই পরের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতেও তাদেরই রমরমা। গত পাঁচ বছর ‘নিরঙ্কুশ’ ভাবেই জেলা চালিয়েছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। ইতিমধ্যে ২০১১ সালে রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ হয়েছে। সেচের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারপরেও কিন্তু নন্দীগ্রামে চাষবাসের হাল ফেরেনি।
সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় খেজুরি, কাঁথি, রামনগরের মতো নন্দীগ্রামের খাল-বিলেও নোনা জল ঢুকে পড়ে। তখন আর চাষ করা যায় না। চাষ হয় শুধু বর্ষায়। বৃষ্টির জল ধরে কিংবা খালের নোনা জলকে মিষ্টি জলে রূপান্তরিত করে নন্দীগ্রামে বিকল্প সেচব্যবস্থা গড়ে তোলা যেত। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকার পরেও তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ তা করে উঠতে পারেনি।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে চাষযোগ্য পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কোনও রকমে দু’টি ফসল চাষ করা যায়। বাকি দুই তৃতীয়াংশ জমিই একফসলি। হলদি ও হুগলি নদী ঘেরা নন্দীগ্রামের অধিকাংশ জমিতে শুধু বর্ষায় চাষ হওয়ায় এখানকার প্রধান ফসল আমন ধান। |
কাজ চলছে |
|
গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল |
৭ কোটি টাকা খরচে ৮৯টি নলকূপ। ৩,৮২০ হেক্টর জমি উপকৃত। |
ক্ষুদ্র সেচ দফতর |
৪৩টি স্বল্প ক্ষমতা ও ৫টি মাঝারি ক্ষমতার গভীর নলকূপ।
খরচ ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ। |
জল ধরো জল ভরো |
৪৪টি পুকুর খনন। বরাদ্দ ২ কোটি ২৫ লক্ষ। ১,৩২০ হেক্টর জমি উপকৃত। |
|
সোনাচূড়ার কৃষক জগন্নাথ বেরা বলেন, ‘‘বর্ষার জলে কেবল আমন চাষ করি। সেচ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় খুবই অসুবিধা হয়।” সেচ নিয়ে অভিযোগ নন্দীগ্রামের সর্বত্র। জমি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া কংগ্রেস নেতা সবুজ প্রধানের কথায়, “নন্দীগ্রামের কৃষি জমি অত্যন্ত উর্বর। শুধু সেচের অভাবেই বর্ষা ছাড়া অন্য সময় চাষবাস হচ্ছে না। বামফ্রন্ট সরকার কিছু করেনি। তৃণমূলও কিছু করছে না।” ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক তথা এসইউসি নেতা নন্দ পাত্রের মতে, ‘‘নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া খাল, রেয়াপাড়া খাল-সহ এলাকার ছোট-বড় খালগুলি সংস্কার করে বর্ষার জল ধরে রাখা হলে বেশ কিছুটা এলাকায় বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করা যেত।”
নন্দীগ্রামে সেচের সমস্যার কথা মানছেন শাসকদলের নেতারাও। তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি তথা হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের পাশে থাকা হুগলি ও হলদি নদীর জল নোনা হওয়ায় চাষের কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাই হুগলি নদীর নোনা জলকে মিষ্টি জলে রূপান্তর করে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।” প্রস্তাব-পরিকল্পনার কথা শোনাচ্ছেন জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি মামুদ হোসেনও। তাঁর বক্তব্য, “হিজলি টাইডাল ক্যানালের মহিষাদলের
অংশ ইতিমধ্যে সংস্কার হয়েছে। নন্দীগ্রামের অংশ সংস্কারের পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।”
শুধু নন্দীগ্রাম নয়, কৃষিপ্রধান এই জেলায় সামগ্রিক ভাবেই সেচ ব্যবস্থার চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক। বোরো ধান ছাড়াও পান, ফুল ও সব্জি চাষের জন্য জলসেচ লাগে। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের ২৫টি ব্লকের মধ্যে পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, এগরা, পটাশপুরের কিছু এলাকায় শুধু সেচের সুযোগ রয়েছে। সরকারি হিসেবে জেলায় মোট ৩ লক্ষ ৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে চাষের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ মোট চাষজমির অর্ধেকেও সেচের ব্যবস্থা নেই।
পরিসংখ্যান বলছে, কৃষিজমিতে জলসেচের জন্য ক্ষুদ্র সেচ দফতরের অধীনে গভীর নলকূপ আছে ১৮৯টি। আর নদীর জল উত্তোলক প্রকল্প রয়েছে ৪৬টি। এতে মাত্র সাড়ে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে জলসেচ সম্ভব। তবে এখন কিছু কাজ হচ্ছে। ওই প্রকল্পগুলি শেষ হলে সেচের হাল ফিরবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তবে নন্দীগ্রামে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা নিয়ে কোনও আশ্বাস দিতে পারেনি প্রশাসন। |
পুরনো খবর: জমি নিয়ে জালিয়াতি, সেও সেই নন্দীগ্রামে |
|
|
|
|
|