নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তবু এক বছরেও তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারল না সল্টলেকের প্রশাসন। সম্প্রতি বিজি ব্লকে একটি বাড়িতে গেস্টহাউসে জুয়ার আসর থেকে সাত জন গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা সেটাই ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সল্টলেকে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি রুখে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে শুধু কমিশনারেট তৈরিই নয়, বিভিন্ন গেস্টহাউস থেকে শুরু করে পরিচারক এবং পরিচারিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সল্টলেক প্রশাসনকে একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বছর কেটে গেলেও অভিযোগ, সেই তথ্যভাণ্ডার আজও তৈরি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই বিধাননগর পুরসভা ও কমিশনারেট পৃথক ভাবে তথ্যভাণ্ডার গড়ার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই কাজ এখনও শেষ করা যায়নি।
বিজি ব্লকের ওই জুয়ার ঠেক প্রসঙ্গে সল্টলেক পুর প্রশাসন জানান, ওই বাড়িটিতে গেস্ট হাউসের কোনও অনুমোদন তাঁরা দেননি। সল্টলেক পুলিশও বাড়িটির তথ্য জানত না বলে তাদের দাবি। স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অনিতা মণ্ডল বলেন, “আমরাই পুলিশকে খবর দিই। ওই বাড়িতে কিছু দিন ধরে জুয়ার আসর বসত। হাতেনাতে ধরা হয়েছে।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত বাড়লে দামি গাড়ি চড়ে একাধিক যুবক-যুবতীকে বাড়িটিতে যাতায়াত করে। হই-হুল্লোড়ও চলে। অথচ বিষয়টি প্রশাসন জানতে পারল তাঁদের থেকে। অর্থাৎ সামগ্রিক নজরদারি ও তথ্যের অভাব ছিল প্রশাসনের।
তথ্যভাণ্ডার এখনও তৈরি হল না কেন? জবাবে পুলিশের একাংশের দাবি, বাসিন্দাদের একাংশ তথ্য দিতে নারাজ। এর আগেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে সল্টলেকে এই তথ্যভাণ্ডার তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার সুপ্রতিম সরকার নিজে ব্লক কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন। সে বারও একই কারণে ওই প্রচেষ্টা সফল হয়নি বলে দাবি পুলিশের। পুলিশের অভিযোগ স্বীকার করেছেন বাসিন্দারাও। যেমন, বিএ ব্লকের এক বাসিন্দার কথায়, “পরিচারিকারা পুলিশের নাম শুনেই কাজ ছাড়ার কথা বলছে।” বাসিন্দাদেরই একাংশের বক্তব্য, সম্পত্তিকর থেকে শুরু করে পুলিশ ভীতি-সহ নানা কারণে তথ্য দিতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। তবে ব্লক কমিটিগুলির একাংশের দাবি, তাঁরা বাসিন্দাদের বোঝাতে রাজি। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করছে না প্রশাসন।
বিজি ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক দীপঙ্কর দাসের অভিযোগ, গেস্ট হাউস নিয়ম মেনে চললে নিয়ন্ত্রণে থাকে।” বাসিন্দাদের একটি সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “গেস্ট হাউসেরও দরকার আছে। প্রশাসন অবিলম্বে সেগুলির মালিকদের নিয়ে আলোচনা করুক। ফলে ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। নজরদারি এবং বাসিন্দাদের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত হবে। আর্থিক ভাবেও আখেরে এতে রাজ্য সরকারেরই লাভ।”
সল্টলেকের মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, বাসিন্দারা এ নিয়ে প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করা যেতে পারে। সল্টলেক কমিশনারেটের এক কর্তা দাবি করেন, তথ্যভাণ্ডারের কাজ চলছে। গেস্ট হাউস-সহ বিভিন্ন বাড়ি যেখানে বাইরে থেকে লোকজন এসে সল্টলেকে সাময়িক বসবাস করছেন, সে বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। আরও তথ্যের প্রয়োজন। তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দাবি, প্রস্তুতির স্তরে আছে তথ্যভাণ্ডারের কাজ। শেষ হলে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করা যাবে।
|