ছ’দিন কিছু না-খেয়ে থাকার পরে ফুচকা খেতে চেয়ে আবদার করেছিলেন বাবা-মায়ের কাছে। সেই মতো ফুচকা কিনতেও যান তাঁরা। আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীর ফোন পেয়ে ফিরে এসে দেখেন, বাড়ির নীচে পড়ে আছে মেয়ের নিথর দেহ। পরে হাসপাতাল তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা, এটি আত্মহত্যা।
শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে পাটুলি থানা এলাকার একটি আবাসনে। মৃতার নাম সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় (৩২)। পুলিশ জানায়, কৈখালির একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে দিন সাতেক হল বাড়ি ফিরেছিলেন সুদেষ্ণা। |
‘ঝাঁপ দিয়ে’ এখানেই পড়েছিলেন সুদেষ্ণা। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সূত্রের খবর, পাটুলি থানার রাজা সুবোধ মল্লিক রোডে গাঙ্গুলিবাগানের একটি বহুতলে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন ওই তরুণী। তাঁরা ওই আবাসনের তিন নম্বর ব্লকের এগারোতলার বাসিন্দা। তরুণীর বাবা, মিহিরদেব মুখোপাধ্যায় বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। পুলিশ জানায়, এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ সুদেষ্ণা জোর করে তাঁর মা-বাবাকে ফুচকা কিনতে পাঠান। মেয়ের কথামতো মা-বাবা চলেও যান ফুচকা কিনতে। তাঁরা বেরোনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই সুদেষ্ণার দেহ পড়ে থাকার খবর জানিয়ে আবাসনের নিরাপত্তা আধিকারিক ফোন করেন মিহিরবাবুকে। মেয়ের খবর পেয়েই তড়িঘড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। দেখেন, আবাসনের ব্লক তিন এবং চারের মাঝখানে পড়ে রয়েছে সুদেষ্ণার দেহ। বাঘা যতীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে সুদেষ্ণাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চিত হয়ে দেহটি পড়ে থাকলেও, তাঁর শরীর থেকে বিশেষ রক্তপাত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সুদেষ্ণার পরিবার সূত্রের খবর, গত ১৩ বছর ধরে তাঁদের মেয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। গত রবিবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকেই সুদেষ্ণা কিছু খেতে চাইছিলেন না। এ দিন হঠাৎ করে তিনি বায়না ধরেন, ফুচকা খাবেন। মেয়ের আবদার মেনে মা-বাবা দু’জনেই ফুচকা কিনতে বেরিয়ে যান। এ দিকে, তার আগেই মেয়ে আবদার করেছিলেন বারান্দার গ্রিল খুলে দিতে হবে। তাঁর ঘরে ঠিকমতো হাওয়া আসছে না। মিহিরবাবু জানান, মেয়ের আবদারে মিস্ত্রি ডেকে এ দিনই তাঁরা গ্রিলটি খুলিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই তরুণীর প্রতিবেশী ফ্ল্যাটের পরিচারিকা সন্ধ্যা নায়েক এ দিন বলেন, “গত কয়েক দিন ধরেই সুদেষ্ণা অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। এমনকী, শুক্রবার নিজের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে উল্টো দিকে তাঁদের ফ্ল্যাটে বার দশেক কলিং বেল বাজিয়ে যান।”
আবাসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার গণেশ ঘোষ বলেন, “আমরা জোর একটা আওয়াজ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি, সুদেষ্ণার দেহ পড়ে রয়েছে। আমরা জানতাম তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন।” পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। তরুণীর বাবা মিহিরবাবুও মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। এ দিনই দুপুরে ধাপা এলাকার একটি পাম্পিং স্টেশনে এক পুরকর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের নাম সৌমিত্র দাস (৪৫)। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার পলতায়। তিনি ওই পাম্পের কাজ করতেন। এ দিন সকালেও তিনি কাজে এসেছিলেন। দুপুর দু’টো নাগাদ তাঁর এক সহকর্মী অফিসের ভিতরে দেহটি দেখতে পান। |