বিয়ের আসরে পণের জন্য বরের নাছোড় দাবি দেখে প্রতিবাদ এল কনের পক্ষ থেকেই। তিনি পাশে পেলেন গ্রামবাসীদেরও।
পণের জন্য বধূ নির্যাতন এ রাজ্যে আকছার ঘটেই চলেছে। নিরুপায় হয়ে বহু দরিদ্র পরিবারের মহিলাকে সেই নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। মানুষ বুধবার দেখল এক অন্য ছবি।
হাসনাবাদের বরুণহাট গ্রামের একটি মুসলিম পরিবারের তরুণী নিজের বিয়ের আসরে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মোটরবাইকের জন্য বরের গোঁ ধরে থাকা মেনে নিতে পারেননি। পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ওই ছেলেকে বিয়ে করতে তিনি রাজি নন। এ কথা জানার পরে গ্রামবাসীরাও আর ছেড়ে কথা বলেননি। পাত্র ও তাঁর বাবাকে রাতভর খেতে না দিয়ে মারধর করে তাঁরা পুলিশের হাতে তুলে দেন।
বরুণহাটে ওই বিয়ের আসর বসেছিল বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার সকালে সেখান থেকেই পুলিশ ওই থানা এলাকার ট্যাংরা গ্রামের বাসিন্দা, পাত্র আসরফ মোল্লা এবং তার বাবা সহিদুল মোল্লাকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, পণ নেওয়া এবং প্রতারণার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ধৃতেরা অবশ্য এ দিনই বসিরহাট আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পায়। |
ঘটনার পরে কনে বলেন, “ও যে অমন করবে, বুঝিনি। আমরা দু’বছর প্রেম করেছি। বিয়ের আসরেই ওকে পুরোপুরি চিনলাম। নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মোটরবাইক না পাওয়ায় যে বিয়েতে বেঁকে বসে, সে না জানি বিয়ের পরে আরও কী করবে! তাই আমিও আর ওকে বিয়ে করতে চাইনি।” বেধড়ক মার খাওয়ার পরেও আশরফ অবশ্য বলে, “বন্ধুরা বলেছিল ওই ব্র্যান্ডের মোটরবাইক সবচেয়ে ভাল। তাই শ্বশুরমশাইকে কম দামি বাইকটি পাল্টে দিতে বলি। উফ্, লোকজন কী মারটাই না মারল। খেতেও দিল না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁচিশের আশরফ তামিলনাড়ুর একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। বরুণহাটের ওই তরুণীর সঙ্গে দু’বছর আগে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দিন কয়েক আগে ছিল আশীর্বাদ। সে দিনই সহিদুল পণ হিসেবে খাট, বিছানা-সহ নানা জিনিসপত্র, কনের জন্য সোনার গয়না, ছেলের জন্য সোনার আংটি এবং একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মোটরবাইক দাবি করে। মহা ফাঁপরে পড়ে যান কনের বাবা। তিনি বিড়ি শ্রমিক। তবু ধারদেনা করে পাত্রপক্ষের যাবতীয় চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিনে এনেছিলেন ৫০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরবাইকও।
বুধবার রাত ন’টা নাগাদ ছিল বিয়ে। অনুষ্ঠান-বাড়িতে তত ক্ষণে এসে গিয়েছেন আমন্ত্রিতেরা। শুরু হয়ে গিয়েছে খাওয়া-দাওয়া। অনুষ্ঠান-স্থলের একপাশে রাখা ছিল মোটরবাইকটি। কিন্তু রেজিস্ট্রির সময়ে আশরফের চোখ পড়ে যায় তাতে। ওই মোটরবাইক দেখেই সে খেপে ওঠে। তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। দাবিমতো বাইক না পেলে বিয়ের আসর ছাড়ারও হুমকি দেয়। একই হুমকি দিতে থাকে তার বাবাও। অনেক অনুরোধেও আশরাফকে বিয়েতে রাজি করাতে পারেনি কনেপক্ষ। শেষমেশ কনের সিদ্ধান্ত জানার পরেই আমন্ত্রিত গ্রামবাসীরা ওই দু’জনকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে উত্তমমধ্যম দিতে থাকেন। সকালে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
কনের দাদা বলেন, “ধারদেনা করে বিয়ের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের অবস্থা পাত্রপক্ষ জানত। তবু এ ভাবে যে আমাদের অপমানিত হতে হবে কে জানত!” কনে বলেন, “আশীর্বাদের পরের দিনই আমাদের সুবিধার জন্য আশরফ নিজের আংটি বরপণ হিসেবে আমাকে দিয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম ও কত মহৎ। বাবাকে সে কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিয়ের আসরে ও ভোল বদলাল।” গ্রামবাসীরা কনের দৃঢ়তায় মুগ্ধ। |