দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া সোনারপুর
মর্জির অটো
চলো বেনিয়মমতে
নির্দিষ্ট রুট রয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই অধিকাংশ অটোচালক সেই রুট মেনে গাড়ি চালাতে চান না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় গড়িয়া থেকে নিয়মিত সোনারপুর এবং বারুইপুর যাতায়াতকারী যাত্রীদের। এই দুই রুটের নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বিভিন্ন মহলে বার বার সমস্যার কথা জানালেও কোনও সুরাহা হয় না।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে গড়িয়া থেকে সোনারপুরের অধিকাংশ অটোই হিন্দুস্থান মোড় বা মহামায়াতলার পরে আর যেতে চায় না। হাতে গোনা কয়েকটি অটো যায় কামলগাজী পর্যন্ত। সেখান থেকে ফের সোনারপুরের অটো ধরতে হয়। গড়িয়া থেকে সোনারপুর সরাসরি পৌঁছতে ভাড়া লাগে ১১ টাকা। কিন্তু বার বার অটো বদল করে যেতে হয় বলে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া লেগে যায়।
আবার বারুইপুরের অটো সন্ধ্যার পরে কামালগাজী, হরিনাভি অথবা হরহরিতলা পর্যন্ত যায়। গড়িয়া-সোনারপুর রুটের এক নিত্যযাত্রী আরতি চক্রবর্তীর কথায়: “সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার বিষয়টাই নির্ভর করে অটোচালকদের মর্জির উপরে।”
সন্ধের পরে গড়িয়া মোড়ে পা দিতেই বোঝা গেল যাত্রীদের এই অভিযোগের গুরুত্ব কতটা। কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটোর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যাত্রীরা। বারুইপুর বা সোনারপুর কোন অটো যাবে তা কোনও অটোচালক বলতে পারছেন না। যাত্রীদের কেউ কেউ অটোর আশা ছেড়ে দিয়ে ঝুলে পড়লেন ভিড় বাসে। কেউ আবার ‘কেন যাবে না’ প্রশ্ন তুলে অটোর চালকের সঙ্গে বিস্তর কথা-কাটাকাটি শুরু করেছেন।
এই দুই রুটে নিত্যযাত্রীদের সমস্যার কথা স্বীকার করে সিটুর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক কমল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই দুই রুটের অটোচালকদের সম্পর্কে এই অভিযোগ অনেক বার শুনেছি। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে এই সব রুটের ইউনিয়ন এখন তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। আমাদের সময়ে এ ধরনের অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হত। এখন আর তা হয় না।”
কিন্তু সন্ধ্যার পরে অটোচালকদের এ হেন মর্জির কারণ কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোচালক জানালেন, ‘শর্ট ট্রিপ’-এ অনেক বেশি লাভ। তাই অধিকাংশ চালকই দূরে যাওয়ার বদলে কাছাকাছি জায়গায় যেতে চান। সন্ধের পরে দূরে যাত্রী নিয়ে গেলে ফেরার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। কিন্তু কাছাকাছি গেলে সেই সমস্যা হয় না। গ্যাসেরও সাশ্রয় হয়। তাই চালকেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যাওয়ার জায়গা ঠিক করে নেন। এলাকায় ঘুরে জানা গেল, বহু বার অটোচালকদের এই খামখেয়ালিপনা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।
গড়িয়া-বারুইপুর রুটের তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত ‘বারুইপুর অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। অধিকাংশ জায়গায় দীর্ঘ দিন অটো ইউনিয়ন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন সিটুর মদতে বিভিন্ন জায়াগায় কিছু ‘কাটা রুট’ রাখা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে এই সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হয়েছে।”
দু’পক্ষ পরস্পরকে যতই দোষারোপ করুক, দুই রুটের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা হল, ‘শর্ট ট্রিপ’-এর হিসেবের ক্ষেত্রে সব ইউনিয়নের চালকই সমান ব্যবহার করেন। এই রসায়নে রাজনীতির কোনও ব্যবধান নেই।

ছবি: সুব্রত রায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.