নাকাল যাত্রী
মর্জির অটো
বাস কমেছে। তাই অটোই ভরসা। কিন্তু তা-ও চলে মর্জিমতো। কখনও বেশি ভাড়া চায়। কখনও পুরো রাস্তা যায় না। কখনও নির্দিষ্ট রুটের বদলে অন্য পথে চলে যায়। হাওড়া স্টেশন-সালকিয়া এবং হাওড়া ময়দান-সালকিয়া রুটের অটো নিয়ে এমনই নানা অভিযোগ নিত্যযাত্রী ও বাসিন্দাদের।
হাওড়া স্টেশন থেকে সালকিয়া যাওয়ার কয়েকটি বাস থাকলেও হাওড়া ময়দান থেকে সালকিয়া আসে শুধু ৫৭এ রুটের বাস। তাও সংখ্যায় কম। দুই রুটে অটোই মূল ভরসা। অভিযোগ, রাত বাড়লেই হাওড়া স্টেশন-সালকিয়া রুটের অটো পিলখানা বা নন্দীবাগানের বেশি যেতে চায় না। সালকিয়ার যাত্রীদের বাধ্য করা হয়ে সেখানেই নামতে। এখান থেকে হেঁটে সালকিয়া পৌঁছতে ১৫ মিনিটেরও বেশি লাগে।
অভিযোগ উঠেছে, রাতে ময়দান-সালকিয়া রুটের অটো বামনগাছির বেশি যেতে চায় না। অনেক সময় আবার সীতানাথ বসু লেন হয়ে যায়। এই পথ অটো রুটের মধ্যে পড়ে না। তা ছাড়া রাতে এই রুটের ভাড়াও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। শুধু রাতে নয়, দিনেও সমস্যা হয়। হাওড়া ময়দানে অটোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অভিজিৎ রায়। তাঁর কথায়: “বেশ কিছু অটোচালক বেশি ভাড়া চান। বাসও কম। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে বাধ্য হই।”
নিত্যযাত্রীরা জানান, এখানে বেশ কিছু রুটের বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেমন, ধর্মতলা-শ্রীরামপুর ভায়া সালকিয়া, শ্যামবাজার-জগদীশপুর ভায়া সালকিয়া (এল৩১)। ফলে যাত্রীদের অটো-নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু অটোর সংখ্যাও কমে গিয়েছে। অটোচালকরা জানান, হাওড়া ময়দান-সালকিয়া রুটের অটোর সংখ্যা ১৫০ থেকে কমে হয়েছে ৫৬। এতে অটোচালকেরা মর্জিমতো গাড়ি চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন বলে যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ।
ময়দান-সালকিয়া রুটের স্টার্টার জয়দেব দাসের কথায়: “বেশি ভাড়া চাওয়া বা রুট ভাঙার অভিযোগ ঠিক নয়। তবে অটোর সংখ্যা কমে গিয়েছে।” হাওড়ার আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যাপারটি জানতাম না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” যদিও জেলা সিটুর সম্পাদক কৃষ্ণস্বপন মিত্র বলেন, “এই দু’টি রুট নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। নানা ভাবে যাত্রীদের হেনস্থা করা হয়। কিন্তু এই অটোগুলি আমাদের ইউনিয়নের নয়। তাই আমাদের কিছু করার নেই।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, “জ্বালানি ও অন্যান্য খরচ বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়েনি। তাই রুটগুলি আর লাভজনক ছিল না। বন্ধ গিয়েছে।” উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তৃণমূলের অশোক ঘোষের অভিযোগ, “হাওড়া ময়দান-সালকিয়া রুটে যেমন খুশি অটো যাতায়াত করে। যাত্রীদের মাঝপথেই নামিয়ে দেয়। আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরকে সমস্যার কথা জানিয়েছি।”
জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “রুট ভাঙা বেআইনি। সীতানাথ লেন রুটের মধ্যে পড়ে না। তবে ভাড়া ঠিক করে ওই রুটের অটো ইউনিয়ন। এই দু’টি রুট নিয়ে অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেব। ওখানে কয়েকটি রুটের বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। সিটিসি-র সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন বাস চালানোর জন্য বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। এই রুটের জন্য কিছু আবেদন এসেছে। বিবেচনা করা হচ্ছে।” হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “এ বিষয়ে জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর থেকে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও বলেন, “মানুষের এই ভোগান্তির বিষয়ে জানি। এই রুটে নজরদারি চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.