সম্পাদকীয় ২...
চাই মুক্ত শহর
লিকাতা শহরের ব্যস্ত ও স্পর্শকাতর এলাকাগুলিকে মিছিল-সমাবেশ হইতে মুক্ত রাখার একটি প্রস্তাব হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে পুলিশ জমা দিয়াছে। প্রস্তাবে ধর্মতলা ও বিবাদী বাগের পাশাপাশি কলেজ স্কোয়ার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলের মতো লেখাপড়ার পাড়াকেও মিছিল-সমাবেশ হইতে মুক্ত করার কথা আছে। প্রস্তাবটি স্বাগত। পুলিশ যে স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া ইহা করিয়াছে, এমন ভাবার কারণ নাই। কিন্তু আদালত বড় বালাই। বিশেষত কলিকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ যখন বিষয়টি লইয়া মাথা ঘামাইতেছে, তখন পুলিশ হাত গুটাইয়া থাকে কেমন করিয়া!
পুলিশের স্বার্থই কিন্তু এ ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুতর। রাজনৈতিক দলের নাছোড় সমর্থকদের মিছিল-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করিতে পুলিশ নিয়মিত হিমশিম খায়। কোথাও একটু বাড়াবাড়ি হইলেই নিন্দা ও তিরস্কারের বন্যা বহিয়া যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গায়ের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িলেও তাহাদের নিরুত্তর ও নিষ্ক্রিয় থাকিতে হয়। দিনের পর দিন ইহা নীরবে সহ্য করা সহজ নয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে মিটিং-মিছিল বন্ধে পুলিশের স্বার্থ তাই সর্বাধিক। তবু সম্ভবত যে দল যখন শাসক থাকে, তাহার ভয়েই পুলিশ এ ব্যাপারে আগ বাড়াইয়া কিছু বলিতে বা করিতে পারে না। ডিভিশন বেঞ্চ সেই সাহস জোগাইতে পুলিশ কিছুটা দ্বিধার সঙ্গেই প্রস্তাব জমা দিয়াছে। লক্ষণীয়, পুলিশের প্রস্তাবে মিছিল-সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাও উল্লেখ করা হইয়াছে, তবে সেই সঙ্গে নাকাল নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাও অনুক্ত থাকে নাই। ভারসাম্য রক্ষাকারী এই প্রস্তাবেই পুলিশের দ্বিধার বিষয়টি স্পষ্ট। দ্বিধা অকারণ নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্টের কারণে এক মাস পিছাইয়া দেওয়া শাসক দলের বাৎসরিক সমাবেশ কলিকাতার প্রাণকেন্দ্রেই আয়োজিত হওয়ার কথা। পুলিশ-কর্তাদের সাধ্য নাই, তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের জমায়েত প্রাণকেন্দ্র হইতে সরাইতে বলেন। অন্যান্য সব সমাবেশ-মিছিলের ক্ষেত্রে অবশ্য ছুটির দিনে এবং কলিকাতা পুরসভার নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া স্থানে তাহা আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে।
কেবল শহরের ব্যস্ত প্রাণকেন্দ্র নয়, কলেজ স্কোয়ার ও যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়-পাড়াকেও কাজের দিনে মিছিল-সমাবেশমুক্ত রাখার প্রস্তাবটি স্বাগত। এই দুই এলাকাতেই পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষার জন্যই ভিড় জমায়, চিৎকৃত স্লোগানে উদ্ব্যস্ত হওয়ার জন্য নয়। তবে ছুটির দিনেই বা কেন শহরকে সমাবেশ-মিছিলে জর্জরিত করা হইবে, তাহাও বোঝা দুষ্কর। অফিসযাত্রীদের ছুটি থাকিলেও সকল নাগরিক ‘ছুটির দিনে’ বাড়ির বাহিরে যান না, এমন নয়। নানা কাজে বহু মানুষকেই বাহির হইতে হয়, তাঁহাদেরই বা হেনস্থা করা কেন? সর্বোপরি, শহরের মধ্যে রাস্তা জুড়িয়া আদৌ কেন এমন মিছিল-সমাবেশ করিতে হইবে? যাঁহারা সমাবেশ করিতে চাহেন, তাঁহারা ‘বাজার-দর’ মিটাইয়া প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাগৃহ বা স্টেডিয়াম ভাড়া করিতে পারেন। সেই গণতান্ত্রিক অধিকার তাঁহাদের আছে বইকী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.