সিনেমা সমালোচনা...
দুর্দান্ত ছবি
জকাল ‘প্রশংসাপত্র’ হাতে নিয়ে ব্যবসায়িক সাফল্যের দরজা পেরোয় এমন ছবি ক’টাই বা হয়?
না, না, হয় বইকি! তেমনই একটি ছবি হল ‘লুটেরা।’ প্রশংসা যেমন শুনেছি, তেমনি আবার ব্যবসায়িক সাফল্যের দরজায় টোকাও মারছে। এখন দেখা যাক কত দূর এগোতে পারে।
‘লুটেরা’তে লুটেরা কে? বরুণ শ্রীবাস্তব। মানে রণবীর সিংহ। কী লুট করে সে? অ্যান্টিক, প্রাচীন, দামি জিনিসপত্র। দলও আছে একটা। সময়কাল ১৯৫৩ সাল। জমিদারি প্রথা লুপ্ত হওয়ার সময় নকল সরকারি কাগজপত্র দেখিয়ে, সরকারের নাম করে তুলে নিয়ে যায় দামি দামি আসবাব, ঘর সাজাবার জিনিসপত্র কিংবা মন্দিরের মূর্তি।
পশ্চিমবঙ্গের মানিকপুর নামের একটি গ্রামে আসে বরুণ। সঙ্গে আসে তার শাকরেদ বিক্রান্ত। জমিদারের মেয়ে শান্তিনিকেতনে পড়া ‘পাখি চৌধুরী’ (সোনাক্ষী সিংহ) সেই সময় গাড়ি চালানো শিখছিল রাস্তায়। তার গাড়ি ধাক্কা মারে বরুণের মোটর বাইকে। সেই পরিচয়। সপ্রতিভ, স্মার্ট বরুণকে প্রথম দর্শনেই ভাল লেগে যায় পাখির। বরুণ তার বন্ধুকে নিয়ে জমিদারবাড়িতেই ওঠে। এই গ্রামের জমির তলায় দামি দামি জিনিসপত্র আছেএই বাহানায় শুরু হয় মাটি খোঁড়ার কাজ।
লুটেরা
সোনাক্ষী সিংহ, রণবীর সিংহ, বরুণ চন্দ
তার সঙ্গে শুরু হয় পাখি-বরুণের রোম্যান্স। মিষ্টি কয়েকটি মুহূর্তকে সুন্দর ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন সোনাক্ষী এবং রণবীর। পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের দক্ষতায় দৃশ্যগুলি মাধুর্যময় হয়ে ওঠে। ভাল লাগে দর্শকের। বিশেষ করে ওদের পাশাপাশি বসে ফিসফিস করে কথা বলা ফিল্মে অভূতপূর্ব একটা নতুন সংযোজন। নিঃসন্দেহে রেকর্ডিংয়ের প্রশংসা করতে হয়।
তার পর একদিন জমিদার বাড়ির সব কিছু হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে বরুণের দল। প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে হতবাক হয়ে যায় পাখি। মারা যান জমিদার চৌধুরী (বরুণ চন্দ)। এর পর অসুস্থ পাখি ডালহৌসির পাহাড় ঘেরা বরফে ঢাকা তাদের নিজেদের আর একটা বাংলো বাড়িতে এসে ওঠে, সঙ্গে পরিচারিকা নিয়ে। অসাধারণ প্রত্যেকটি ফ্রেমতুষারপাত, সাদা বরফে আচ্ছন্ন প্রতিটি গাছপালা, রাস্তাঘাট। মুগ্ধ করে দর্শককে।
অন্য দিকে প্রতারক বরুণ শ্রীবাস্তব আরও অনেক প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের তাড়া খেতে খেতে এসে ওঠে পাখির ওই বাড়িতে। পাখির গেস্ট হাউসে।
না যা ভেবেছিলাম তা নয়। ছবির শেষটা একেবারে অন্য। ও’ হেনরির ‘দ্য লাস্ট লিফ’সব পাতা ঝরে যাওয়া একটা গাছের ডালে নিজে হাতে আঁকা একটা পাতা ঝুলিয়ে দেয় বরুণ। তার পর? না, সাসপেন্স নষ্ট করতে চাই না।
প্রথমেই ছবিটার যে দিকটা সকলের ভাল লেগেছে তা হল টানটান চিত্রনাট্য, সংলাপ। এবং টেকনিক্যাল কাজ। মহেন্দ্র শেঠির অসাধারণ ফোটোগ্রাফি। এক একটি ফ্রেমিং যেন এক একটি পেন্টিং। ছবির মুডের সঙ্গে তাল রেখে অমিত ত্রিবেদীর আবহ সংগীত এবং গানের ব্যবহার। জিরো সাইজের যুগে সোনাক্ষীর ভরাট শরীর, তার সঙ্গে মিষ্টি হাসি, চোখের অভিব্যক্তি এবং অভিনয় নিঃসন্দেহে সোনাক্ষীকে প্রথম সারির অভিনেত্রীদের পাশে বসিয়ে দিল। শুধু পরিচালক যদি সোনাক্ষীকে দিয়ে কয়েকটি বাংলা সংলাপ বলাতেন, তা হলে চরিত্রটা আরও বেশি বাঙালি হয়ে উঠত। ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’, ‘রিকি বহেল’য়ের নায়ক রণবীর সিংহ সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী একটা চরিত্র করে তাঁর আসনটাও বলিউডে পাকা করে নিলেন। বাকিরাও কেউ কম যাননি। পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানেদারুণ ছবি করেছেন মশাই। সাবাস। আপনার কাছ থেকে আরও ভাল ভাল ছবির আশায় রইলাম। বালাজি প্রোডাকশন্সের একতা কপূর ও শোভা কপূরকেও ধন্যবাদ।
সব শেষে একটা কথা বলতেই হয়। বাংলা ছবির শ্যুটিং করতে আমরা কেউ কেউ যাচ্ছি ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দুবাই আর হিন্দি ছবির পরিচালকেরা ‘কহানি’, ‘বরফি’, ‘লুটেরা’ নিয়ে আসছেন পশ্চিমবঙ্গে। ব্যাপারটা নিয়ে আমাদেরও একটু ভাবা উচিত, তাই না?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.