লিটল ম্যাগাজিনের শতবর্ষ। সেই উপলক্ষে জেলায় জেলায় লিটল ম্যাগাজিন-এর অবস্থা নিয়ে একটি তথ্যচিত্রের কাজ শুরু করল এক বেসরকারি সংস্থা। ইতিমধ্যেই শ্যুটিং শেষ হয়েছে দুই মেদিনীপুর ও কলকাতায়। চলছে মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে।
কেন এমন উদ্যোগ? কোন হিসেবেই বা লিটল ম্যাগাজিনের শতবর্ষ? তথ্যচিত্রটির প্রধান পরিচালক অভিজয় কার্লেকার জানান, প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজ পত্র’কেই তাঁরা প্রথম বাংলা লিটল ম্যাগাজিন ধরছেন। ১৯১৪ সালে চলিত গদ্যে প্রকাশিত হয় সবুজ পত্র। তাই আগামী বছর লিটল ম্যাগাজিনের শতবর্ষ। তিনি বলেন, “সারা বাংলার কয়েক হাজার লিটল ম্যাগাজিন কর্মী, কবি, লেখক-সহ সংশ্লিষ্ট নানা মানুষ নিরলস পরিশ্রম করে, আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও বাংলার নিজস্ব শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। শতবর্ষে তাঁদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাতেই এই উদ্যোগ। প্রায় সত্তর মিনিটের তথ্যচিত্রে লিটল ম্যাগাজিনের প্রস্তুতি পর্ব থেকে বিপণন, সবটাই আমরা ধরতে চাই।” মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন অ্যাকাডেমির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী বলেন, “এই উদ্যোগ স্বাগত। নানা সময়ে আমরা একজোট হয়ে জেলাশাসক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি নিয়ে দরবার করেছি। জেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলির অধিকাংশই বিষয়ে, ভাবনায় বৈচিত্রপূর্ণ। অথচ পত্রিকাগুলি অর্থসঙ্কট ছাড়াও ছাপাখানা, বিপণন-সহ নানাবিধ সমস্যায় ভোগে। এই তথ্যচিত্র হলে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন নতুন অক্সিজেন পাবে।” |
কথাছন্দের লিটল লাইব্রেরিতে চলছে তথ্যচিত্র তৈরির কাজ।—নিজস্ব চিত্র। |
ইতিমধ্যেই ছবির শ্যুটিং হয়েছে ছাপাখানা, সম্পাদকীয় দফতর, পত্রিকার লেখক-কর্মীদের আড্ডা, বিপণন কেন্দ্র এবং বিভিন্ন গ্রন্থাগারে। তথ্যচিত্রে রয়েছে মেদিনীপুর শহরের লিটল ম্যাগাজিন বিপণন কেন্দ্র ‘ভূজর্পত্র’, কবি-লেখকদের আড্ডাস্থল জেলা পরিষদ চত্বর। থাকছে বিভিন্ন সম্পাদক-কবি-লেখক-পাঠকের সাক্ষাৎকারও। কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রের সম্পাদক সন্দীপ দত্ত এই উদ্যোগ সম্পর্কে বললেন, “উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদের নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও মেধার জায়গাটাও ছবিতে ধরা থাকবে ভেবে ভাল লাগছে। তবে তথ্যচিত্রটিকে যথাযথ ও তথ্যনিষ্ঠ হতে হবে।”
রাজ্যে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির নিজস্ব ভবন গড়ে উঠেছে এগরায়। সংস্থার সম্পাদক চক্রধর দাসের কথায়, “নিয়মিত, যথাযথ ভাবে পত্রিকা এক জায়গায় সংগ্রহ করতে পারলে তা আলাদা কদর পায়। সে জন্যই কলকাতা থেকে এখানে বহু গবেষক, পাঠক আসেন। সরকার লিটল ম্যাগাজিনগুলির পাশে দাঁড়ালে উপকৃত হবেন সকলেই।” অনেক সময় পত্রিকার জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিয়মিত পত্রিকা নেওয়া বা সংরক্ষণেও উদ্যোগী হয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বুদ্ধদেব বসু-সহ একাধিক গবেষক ‘সবুজ পত্র’কেই প্রথম লিটল ম্যাগাজিন বললেও লিটল ম্যাগাজিনের কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞাই তৈরি হয়নি আজও। তবু সে বিতর্ক সরিয়ে রেখে ‘শেপ’-এর এই উদ্যোগ লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনকে একটা নতুন আকার দেবে, আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল। |