নজরে নির্বাচন
পড়েই রইল ধান কেনার টাকা
ধানের সহায়ক মূল্য পেতে গত মরসুমে হয়রান হয়েছিলেন বর্ধমানের চাষিরা। চালকলের দেওয়া বহু চেক বাউন্স হয়ে যায়। সমবায়গুলিও খুব বেশি ধান কেনেনি। সরকারি মূল্য পেতে রাস্তা অবরোধও করেছেন চাষিরা।
অথচ বর্ধমান জেলা পরিষদের খাতা বলছে, ধান সংগ্রহের জন্য ধার্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি তাদের তহবিলেই পড়ে ছিল। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে যা থেকে একটি টাকাও খরচ করা হয়নি। জেলা সভাধিপতি উদয় সরকার সিপিএম দলের। তিনি দাবি করছেন, ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি বসিয়ে তাঁকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। গত দু’বছরে তাঁকে দিয়ে একটি চেক-ও সই করানো হয়নি। কাজেই তিনি কিছু জানেনও না।
ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটির মাথায় যিনি, সেই জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা আবার বলছেন, “কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কী বলছেন, তা নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। তবে ওই কমিটির এ সব করা কাজ নয়। টাকা খরচ জেলা পরিষদেরই করার কথা।” জেলা পরিষদ টাকা খরচ করছে কি না, তা অবশ্য দেখার কথা কমিটিরই। তারা মাত্র একটি মিটিং করেছে গত বছর।
মন্তেশ্বরে চাষিদের বিক্ষোভ। —ফাইল চিত্র।
জেলাশাসক কোনও ব্যাখ্যায় না গেলেও জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, আগেই ধান কেনার জন্য জেলার সমবায় সমিতিগুলিকে বিনা সুদে ওই টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল। তারা খোলা বাজারে চাল বিক্রি করে ঋণ ফেরত দিয়েছে। সেটাই জেলা পরিষদের হাতে রয়ে গিয়েছে। এর পরে ওই টাকা সরকারের কাছে ফেরত যাবে। কিন্তু অত বিপুল পরিমাণ টাকা গোটা বছর পড়ে অব্যবহৃত পড়ে রইল কেন, কেনই বা কোন সমবায় কত টাকা ফেরত দিয়েছে তার হিসেব দেখানো হয়নি জেলা পরিষদের বাৎসরিক হিসেবে, তার সদুত্তর মেলেনি।
স্বনিযুক্তি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ধান সংগ্রহের জন্যও জেলা পরিষদের পৃথক চলমান তহবিল আছে। তাতে থাকা ২৯ লক্ষ টাকার অনেকটাই খরচ হয়েছে। কিন্তু ধান প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আসা টাকার সিকি ভাগও খরচ হয়নি গত এক বছরে। বিপণন ব্যবস্থা না থাকাতেই যে পাইকার ও ফড়েরা লাভের গুড় খেয়ে চাষিদের অভাবী বিক্রিতে বাধ্য করে, তা প্রতি বছর সঙ্কটের সময়েই আলোচনা হয়। অথচ কৃষি বিপণনের জন্য বরাদ্দ টাকায় হাতই দেওয়া হয়নি। কৃষি বাজেট ও পরিকল্পনার পুরো টাকাও পড়ে আছে। উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য ধার্য প্রায় দেড় কোটি টাকার মাত্র ১০ শতাংশ খরচ হয়েছে। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের একটি টাকাও খরচ হয়নি।
পঞ্চায়েতের আসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে তুমুল লড়াই, তা স্বাভাবিত জনজীবনকে কার্যত বিপর্যস্ত করে ফেলে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে নির্বাচন, সেই এলাকার উন্নয়ন কতটা কী হচ্ছে, এলাকার গরিব, প্রান্তবাসী মানুষের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কী করছে, সে কথাটা থেকে যায় সবার চোখ-কানের আড়ালে। অথচ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উদ্দেশ্যই ছিল গ্রামের মানুষের কাছাকাছি প্রশাসনকে নিয়ে আসা। গ্রামের নাগরিকের চাহিদা যাতে তাঁরাই মেটাতে পারেন, ধরাছোঁয়ার বাইরে কোনও সাংসদ-বিধায়কের উপর নির্ভর করতে না হয়।
আজ এক-একটা গ্রাম পঞ্চায়েত দুই থেকে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করতে পারে প্রতি বছর। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত চাইলে করতে পারে না, উন্নয়নের এমন কাজ কার্যত নেই। অথচ বর্ধমানে বহু খাতেই টাকা যথাযথ খরচ করা হয়নি। আগের দুই বছরের তুলনায় শেষ অর্থবর্ষে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জেলা পরিষদের বরাদ্দ টাকা খরচ কমেছে ৮ শতাংশ। গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির দু’টি প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা প্রায় পুরোটাই খরচ হয়েছে। কিন্তু পরিবহণ থেকে পূর্ত বা এডিডিএ-র রাস্তা, জল অনুসন্ধান বা জমি সমীক্ষার কাজে কানাকড়ি খরচ হয়নি। বিভিন্ন ঘিঞ্জি শহরে অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে এত চেঁচামেচি, অথচ দমকল কেন্দ্র নির্মাণের বিপুল টাকা পড়ে রয়েছে। কত রাস্তা সারানো দরকার, কত রাস্তা দখলমুক্ত করা দরকার, সেই তথ্যও নেই জেলা পরিষদের কাছে।
‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’র কথা বলে বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দায় এড়াচ্ছেন। বিরোধীরা আবার সেই ছুতো ধরেই তাঁকে অপদার্থ প্রমাণ করতে ব্যস্ত। প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু জেলা পরিষদের নথিপত্রের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, উন্নয়নের কাজের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা তাঁরা এড়িয়ে গিয়েছেন। জেলা সংসদ, জেলা কাউন্সিলের নিয়মিত বৈঠকে উন্নয়নের কাজ বিষয়ে সওয়াল-জবাবের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, কতটা কাজ হয়েছে। এই বৈঠকগুলিই হচ্ছে না নিয়মিত।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধে পান। তাঁর দফতরেও থাকেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সরকারি অফিসার। দফতরের পরিকাঠামোতে কোথাও কোনও খামতি নেই। কর্মীদের সারা বছরের মাইনে ও অন্যান্য খরচ বাবদ সাধারণ নাগরিক সাড়ে ছ’কোটি টাকা জুগিয়েছেন। অথচ মানুষের বিপন্নতা তৎপর করতে পারেনি জেলা পরিষদের সদস্যদের।
এ বারের ভোটে যদি শাসকের রং পাল্টেও যায়, ছবিটা পাল্টাবে কি?

অনেক কাজ হওয়ার ছিল কিন্তু কিছুই সেভাবে হয়নি। কাঁকসার ডাকবাংলো রোড জেলা পরিষদের রাস্তা, অথচ পিচ উঠে, জল জমে তা চলাচলের অযোগ্য।
সিরাজুল হক: প্রধান শিক্ষক (কাঁকসা বয়েজ হাইস্কুল)
আগের আমলে রাস্তা-ঘাট কিছুই সেভাবে হয়নি। পানীয় জলের ব্যবস্থাও হয়নি। এমনকি গ্রামে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রও গড়ে ওঠেনি। নতুন পঞ্চায়েতের কাছে এগুলিরই দাবি জানাব।
অনিলকুমার ঘোষ: প্রাক্তন শিক্ষক (পাল্লা শ্রীরামপুর স্কুল)
পরিস্রুত পানীয় জলের আশা মেটেনি। প্রায় সব গ্রামেরই এক অবস্থা। একশো দিনের কাজে এখন যে গতি এসেছে, তা যদি আগে আসলে গ্রামের উন্নয়ন আগেই হত।
জয়ন্ত দত্ত: পরিবেশবিদ (বর্ধমান)

রিপোর্ট কার্ড



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.