দেড় মাসের মধ্যে দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগে মালদহ কলেজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কলেজ সূত্রের খবর, গত ৪ জুন মালদহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ্যত্যাগ করেছিলেন। কলেজের পরিচালন সমিতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। ফের তা পদত্যাগ গ্রহণ করার লিখিত আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ১৫ দিনের ছুটিতে কলকাতা চলে গিয়েছেন মালদহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাস চৌধুরী। ছুটি যাওয়ার আগে বুধবার রাতে তিনি কলেজের সমস্ত চাবি পরিচালন সমিতির সভাপতিকে গিয়ে দিয়েছেন।
কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি সন্তোষ চক্রবর্তী বলেন, “ওই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।” এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ায় পরিচালন সমিতির সভাপতি কলেজের প্রবীণ শিক্ষক আতাউর রহমানকে বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকঘন্টার মধ্যেই তিনিও পদত্যাগ করেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাস চৌধুরী বলেন, “আমার মন ভেঙে গিয়েছে। যা পরিস্থিতি চলছে তাতে আমার পক্ষে কলেজ চালানো সম্ভব নয়। শিক্ষামন্ত্রীকেও সব জানিয়েছি। পরিচালন সমিতি যতই চাপ দিক না কেন, আমি আর দায়িত্ব নিচ্ছি না।”
কলেজ সূত্রের খবর, অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত অবসর নেওয়ার পর গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ সালে প্রভাসবাবু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কলেজে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়। এরই প্রতিবাদে ৪ জুন অনলাইন ভর্তি বন্ধের দাবিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ওইদিন প্রভাসবাবু পদ্যত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু পরিচালন সমিতি তা গ্রহণ করেনি। গত ৫ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটা পযর্ন্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের ঘেরাও করে চাপ দিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষধ স্নাতক স্তরের ১০৬ টি ফর্ম তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
গত বুধবার কলেজ পরিচালন কমিটির বৈঠকে ১০৬ টি ফর্মের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরে তিনি ফের চিঠি দিয়ে কলকাতা চলে যান। সাময়িকভাবে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয় আতাউর রহমানকে। কিন্তু সকালে দায়িত্ব নিয়ে বিকালে তিনিও পদত্যাগপত্র পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
আতাউর রহমান বলেন, “আমাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হলেও আর্থিক এবং ভর্তির বিষয়টি দেখতে হবে না বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই ১০৬টি ফর্মে সই করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু তা তো আমার দেখার কথা ছিল না। এই অবস্থায় আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। পদত্যাগপত্র পরিচালন কমিটির সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।” এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা পরিচালন কমিটির সদস্য দেবপ্রিয় সাহা বলেন, “কলেজে ভর্তির সমস্যা রয়েছে ঠিকই। তবে চাপাচাপির কোনও বিষয় নেই। আগামী শনিবার পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
কলেজ সূত্রের খবর, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাসবাবু গত মঙ্গলবার কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে স্থানীয় বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। পরিচালন সমিতির বৈঠকের পর অধ্যক্ষ পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে কলেজের সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করেন। এই প্রসঙ্গে পর্যটন মন্ত্রী বলেন, “যে কেউ পদত্যাগ করতেই পারেন। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।”
|