কলকাতা হাইকোর্টের জাল নির্দেশ দাখিল করে আগাম জামিন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোচবিহারের এক অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তার বিরুদ্ধে শনিবার কোচবিহারের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে জাল নথি দাখিল করে ওই ঘটনা ঘটেছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম বিকাশ দত্ত। বাড়ি কোচবিহারের রাজারহাট এলাকায়। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে কোচবিহারের জেলা ও দায়রা বিচারক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে অভিযোগ জানান ওই মামলার সরকারি কৌঁসুলি কল্লোল বসু। তার ভিত্তিতেই আগাম জামিন খারিজ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক সন্দীপ মান্নাকে নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী কল্লোল বসু বলেন, “হাইকোর্টের আগাম জামিনের নির্দেশ যে আদালতে মামলা রয়েছে সেখানে জমা দিতে হয়। অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা বিকাশ দত্তের জামিনের জন্য জাল নথি দাখিল করা হয়েছিল। মামলার তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাচাই করায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। জেলা ও দায়রা বিচারক পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারককে নির্দেশ দিয়েছেন। এমন ঘটনা আগে কোচবিহারে হয়েছে বলে জানা নেই।”
অভিযুক্তের হয়ে যিনি ওই জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন সেই আইনজীবী জয় সেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। তাঁর হয়ে মোবাইল ফোনে অন্য এক ব্যক্তি বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে ওঁর কিছু বলার নেই। যা বলার বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা বলবেন।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে অর্থলগ্নি সংস্থা খুলে গ্রাহকদের টাকা না মেটানর অভিযোগে বিকাশ দত্ত সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গত এপ্রিলে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। আইপিসির ৪২০ ধারায় প্রতারণা ও ৪০৬ ধারায় টাকা আত্মসাতের মামলা রুজু করে। পুলিশ তাদের মধ্যে মালদহের বাসিন্দা এক মহিলা ধরা পড়লেও বাকিরা গ্রেফতার হননি। এক গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই মামলা রুজু হয়। তা নিয়ে কোচবিহার জেলা আদালতে প্রথমে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েও বিকাশবাবু তা তুলে নেন। শনিবার কলকাতা হাইকোর্টের ৪ জুলাই তারিখের শুনানিতে জামিনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে নথি দাখিল করেন তাঁর আইনজীবী।
ওই মামলার সরকারি আইনজীবী কল্লোল বসু বলেন, “একই মামলায় অভিযুক্ত অন্য এক মহিলার জামিনের আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। অথচ ওই ব্যক্তির আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে বলে নথি দাখিলের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। ওই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সংশ্লিষ্ট মামলার কেস নম্বর ও তারিখ দিয়ে খোঁজ করতেই দেখা যায় হাইকোর্টের যে নম্বর দাখিল করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন মামলার। তার কপিও আদালতে পেশ করা হয়েছে।” কোচবিহার বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক ঘোষ জানান, ওই আইনজীবী জয় সেন দাবি করেন, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে আরেক আইনজীবী শুনানিতে পাঠান। অশোকবাবু বলেন, “জয়বাবু তাঁকে ফাঁসানোর অভিযোগ আমাদের কাছে জানিয়েছেন। পুরো বিষয়টি আদালত হাইকোর্টে জানিয়েছে। আমরা প্রকৃত অভিযুক্তের শাস্তি চাইছি।” তৃণমূল প্রভাবিত আইনজীবী সংগঠনের কোচবিহারের মুখ্য উপদেষ্টা আবদুল জলিল আহমেদ নথি জালের বিষয়টি তদন্ত করে মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। |