ভগ্নপ্রায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেলে না পরিষেবা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রেজিনগর |
রেজিনগরের লোকনাথপুর মোড় থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর কয়েক কিলোমিটার এগোলেই মুরুটিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বাইরে কোনও সাইনবোর্ডের অস্তিত্ব নেই। ফলে অপরিচত কারোর মালুমই হবে না এখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে বলে। হাসপাতালের দেওয়ালগুলিতে নোনা ধরেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চৌহদ্দি বুক সমান আগাছায় ভরা। অথচ ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ের একমাত্র এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষ নির্ভরশীল। কোনও স্থায়ী সুইপার, গ্রুপ ডি কর্মী নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে ও ভিতরে ঝাট পড়ে না নিয়মিত। খাতায়-কলমে দু’জন ডাক্তার রয়েছেন। একজন অ্যালোপ্যাথির। অন্য জন হোমিওপ্যাথির চিকিত্সক। অভিযোগ, অ্যালোপ্যাথির চিকিত্সক নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। কর্মী আবাসন দীর্ঘদিন মেরামতির অভাবে ভগ্নপ্রায় অবস্থা। কোনও কোনও দরজায় পাল্লা নেই। জানালাগুলোও ভেঙে গিয়েছে। আউটডোরের হালও বেহাল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনও প্রাচীর নেই। তাই গরু, মোষ, শুকরদের অবাধ বিচরনভূমি ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্সা নিতে আসা মহম্মদ হানিফ শেখ বলেন, “হাসপাতাল নয়, এটা তো একটা আস্ত শুয়োরের খোঁয়াড়। এক সময় ইনডোর পরিষেবা চালু থাকলেও সে সব আজ অতীত।” গ্রামেরই বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডলের কথায়, “এক জন মহিলা ডাক্তার আছেন। তিনি অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সা করেন। সোম থেকে শনিবার বেলা ৯টা থেকে ২টো পর্যন্ত তাঁর থাকার কথা। কিন্তু তিনি নিয়মমতো আসেন না।” হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সক সেলিমউর রহমান বলেন, “পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। এলাকার মানুষের দাবি, এটাকে একটা গ্রামীণ হাসপাতালে পরিবর্তিত করতে হবে।” |
স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। গত সপ্তাহে তীব্র পেটের যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিলেন ঝর্নাবিবি। তাঁর কথায়, “এসে দেখি ডাক্তারের পাত্তা নেই। ওই অবস্থাতেই ভ্যানে চেপে রেজিনগর মোড়ে এলাম। তারপর বাস ধরে বেলডাঙার হাসপাতালে যেতে হল।” হাসপাতালে দু’জন আছেন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান। হাসপাতালে তিন জন ফার্মাসিস্ট আছেন। জি এন এম মহিলা স্টাফ আছেন। এত সত্ত্বেও চিকিত্সা হয় না কেন? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর কথায়, “আসলে সকলেই আসে অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সকের কাছে। এবং দ্রুত চিকিত্সা করে সুস্থ হতে। কিন্তু না-পেলেই সমস্যা হয়।”
বিনডাঙা-২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস সাহা বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। তবে নির্বাচন শেষ হলেই কাজ শুরু হবে। তবে ওখানে সমস্ত পরিষেবাই মেলে। সময় মতোই সব হয়। অ্যালোপ্যাথির যিনি চিকিত্সা করেন তিনি সপ্তাহে দু’দিন কাশীপুর ও দাদপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। তাই ওই কেন্দ্রে যেতে পারেন না। সেই সময় অন্য চিকিত্সক ও ফার্মাসিস্টরা কাজ করেন। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
|