রক্তসঙ্কট মালদহ, রায়গঞ্জে |
রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে মালদহ ও রায়গঞ্জে। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না পেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন রোগীদের পরিজনেরা। এ দিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের বোর্ডে সব বিভাগের রক্তের মজুত সংখার পাশে ‘শূন্য’ লেখা দেখা গিয়েছে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে এক ইউনিট রক্ত না থাকায় ৭৫০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপশি জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বেসরকরি নার্সিংহোমের রোগী ও তাদের পরিজনরা বিপাকে পড়েছেন।
মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “রক্তের সংকটের কথা জেনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দিয়ে রক্তদান শিবির করার অনুমতি চেয়ে বৃহস্পতিবারই রাজ্য নিবার্চন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। রাজ্য নিবার্চন কমিশনারের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দিয়ে রক্তদান শিবির করে সংকট মেটানার চেষ্টা হবে।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্র বলেন, “রক্তের সংকট সম্পর্কে অবহিত। পঞ্চায়েত নিবার্চনের জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্তদান শিবির বন্ধ থাকায় রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে।”
জেলা ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসে তিনটি রক্তদান শিবিরে মাত্র ১০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। যা দু’দিনেই ফুরিয়ে গিয়েছে। চাঁচলের মালতিপুরের মহকুমা গ্রামের নাজবুল বিবিকে বুধবার পরিবারের লোক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ভর্তি করানোর পরে নাজবুল বিবির দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। নাজবুলা বিবির স্বামী মহম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, “কাল থেকে রক্তের জন্য ব্লাডব্যাঙ্কের দরজার সামনে বসে রয়েছি। এক ইউনিট ও রক্ত পাচ্ছি না। দাতাও পাচ্ছি না।” রক্তের সংকটে দুর্ভোগে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তেরা। ওয়েস্টবেঙ্গল ভলেন্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম জেলা সম্পাদক সৌমিত্র দত্ত বলেন, “জেলায় ৪৫০-র বেশি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী। তাদের অনেকেরই বাইরে থেকে রক্ত কিনে রক্ত দেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই। মাসে দুইবার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের রক্ত দিতে হয়। কীভাবে সমস্যা মিটবে জানি না।”
ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, প্রতিদিন ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৫ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে রায়গঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় যেখানে গড়ে ৭টি করে রক্তদান শিবির হয়, সেখানে গত মে মাসের ২৬ তারিখের পর থেকে মাত্র পাঁচটি রক্তদান শিবির হয়েছে। ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অনির্বাণ বেরা বলেন, “গত একমাস ধরে মাত্র ৩ থেকে ৫ ইউনিট রক্ত মজুত থাকছে।’’ রায়গঞ্জের রাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মামুদ আলি বলেন, “বোন প্রসূতি বিভাগে ভর্তি। দুই ইউনিট এ-নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে বলেছেন চিকিত্সক। ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত নেই। রক্তদাতা খুঁজে পাইনি।”
ব্লাডব্যাঙ্কের আধিকারিক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “রক্ত না থাকায় রোগীর বাড়ির লোকজনকে রক্তদাতা যোগাড় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” উত্তর দিনাজপুরের জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ ও জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, রক্ত সঙ্কট মেটাতে তাঁরা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন। সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “অরাজনৈতিক ভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজনের চেষ্টা করছি।” |