চিকিত্সা পরিষেবার অভাবে ধুঁকছে রেজিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ১৪টি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ। ওই এলাকায় রয়েছে ২টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ২টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১টি গ্রামীন হাসপাতাল। কিন্তু ওই ৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে গ্রামীণ হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলিতে পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ।
রেজিনগর থানার মুরুটিয়া ও শক্তিপুর থানার চন্দনপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র কোনও চিকিত্সা পরিষেবা পাওয়া যায় না বলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র দুটিতে সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মী থাকে না। এ দিকে লোকনাথপুর থেকে বেলডাঙা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত এলাকা বরাবর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কিন্তু বেলডাঙা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিত্সা মেলে না। আহতদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে বহরমপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে ৫টি পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা পরিষেবা পেতে শক্তিপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। সেখানেও অধিকাংশ দিন চিকিত্সক ছুটিতে থাকেন বলে অভিযোগ। ১০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্সক সাকুল্যে ৪ জন। কিন্তু সপ্তাহে তিন দিন তাঁরা ডিউটি করেন বলে অভিযোগ। বাকি দিনগুলি তাঁরা নিজেদের মধ্যে ডিউটি ভাগ করে ছুটিতে চলে যান বলে গ্রামবাসীরা জানান। তাঁদের কথায়, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর চাপ আছে। ঠিক সময়ে চিকিত্সকের দেখা মেলে না। রোগী নিয়ে ছুটতে হয় বহরমপুর হাসপাতালে।”
এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি সরব হলেও লাভ হয় না কিছুই। সিপিএমের শক্তিপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল দুবে বলেন, “জরুরি বিভাগেও চিকিত্সকের দেখা মেলে না। অনেক সময়ে অস্থায়ী চিকিত্সকের উপরে ভরসা করতে হয়। ৪ জন চিকিত্সক কাগজে-কলমে থাকলেও তাদের অনেকেই কেউ তিনদিন, কেউ দু’দিন হাসপাতালে থাকেন। বাকি সময়ে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার অভিযোগ শোনা যায়।” তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনকে জানানোর পরে কিছুদিন অবস্থার পরিবর্তন হলেও ফের আগের অবস্থায় ফিরে যায়।” তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালের অসামাজিক কাজ চলে।
বেলডাঙা-২ ব্লক কংগ্রেসের (পূর্ব) মিন্টু সিংহ বলেন, “ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে একমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র মুরুটিয়া। সেখানে চিকিত্সকই থাকে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ৬টি পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষ ওই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু চিকিত্সা না পেয়ে তাঁরা প্রায় ১২কিমি দূরে বেলডাঙার হাসপাতালে এবং ৩০ কিমি দূরে বহরমপুরের হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। এতে তাঁদের অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় হয়।”
|
রোগীমৃত্যুতে পথ অবরোধ
নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
গঙ্গারামপুরে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে পথ অবরোধ।
মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি। |
রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর জেলা সফরের মধ্যেই এক রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে। এ দিন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যখন বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে, সে সময় গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা সরব হন। মৃত যুবক আশিস সরকারের (৩২) মামা শিবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। মৃতের আত্মীয়দের অভিযোগ, রোগীর অবস্থা অবনতি হচ্ছে জেনেও তাঁকে অন্যত্র পাঠানো হয়নি। হাসপাতালের সামনে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ঘটনা শুনে মন্ত্রী বলেন, “গঙ্গারামপুরে রোগী মৃত্যুর বিষয়টি দেখতে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেছি।” তৃণমূল নেতা শিবেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, “হাসপাতালে ভাগ্নের চিকিৎসাই হয়নি। ভাল চিকিৎসার জন্য অন্যত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারত।” দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মণ্ডল বলেন, “রোগীর অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা ছিল বলে শুনেছি। রেফার করার মত পরিস্থিতি ছিল না।” গঙ্গারামপুর শহরের পূর্বহালদার পাড়ার বাসিন্দা মৃত আশিসবাবু রবিবার রাতে পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।” |