ভাঙা হাতের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর প্রাণ গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর। হাওড়ার বাকসাড়ার বাসিন্দা তৃষ্ণা রায় (১১) নামে ওই বালিকার মৃত্যুর ঘটনার প্রায় দু’মাস পরে অভিযুক্ত চিকিৎসককেই দায়ী করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট দিচ্ছে হাওড়া স্বাস্থ্য দফতর। তৃষ্ণার বাড়ির লোকজন ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানিয়ে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা।
গত বছরের গোড়ার দিকে সাইকেল থেকে পড়ে বাঁ হাতের হাড় ভেঙে যায় দেবদাস রায় ও কৃষ্ণা রায়ের একমাত্র মেয়ে তৃষ্ণার। অস্ত্রোপচার করে তার হাতে স্টিলের প্লেট লাগিয়ে দেন অর্থোপেডিক চিকিৎসক শুভাশিস সাধুঁখা। তাঁর নির্দেশেই গত ১৯ ডিসেম্বর ফের অস্ত্রোপচার করে প্লেট বার করার জন্য বাবা-মার সঙ্গে দাশনগরের একটি নার্সিংহোমে যায় তৃষ্ণা। অভিযোগ, ওটি-তে নিয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা বাদে শুভাশিসবাবু জানান, অজ্ঞান করার ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তৃষ্ণা। আইসিসিইউ আছে এমন কোনও নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হবে তাকে। কারণ, যে নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার হচ্ছিল সেখানে আইসিসিইউ নেই। শুভাশিসবাবুর উদ্যোগে মধ্য হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বালিকাকে। সেখানে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ পরেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বালিকাটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পরেই মৃতার পরিজনেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। চিকিৎসককে মারধর, নার্সিংহোমে ভাঙচুর, পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে দিনভর। মৃতার বাড়ির লোকজন ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পুলিশে চিকিৎসায় গাফিলতির লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকেও। তার পরেই হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টে মূলত চারটি কারণে ওই চিকিৎসককে দায়ী করা হয়েছে। প্রথমত, যে নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার হয়েছিল সেখানে ন্যূনতম পরিকাঠামো ছিল না। দ্বিতীয়ত, ওই নার্সিংহোমে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। তৃতীয়ত, অস্ত্রোপচার করে প্লেট বার করার জন্য যে ভাবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ‘লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া’ করতে যান তা অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। এবং চতুর্থত, ওই চিকিৎসক ১২০০ টাকা বেশি আয় করবেন বলে অ্যানাস্থেটিস্ট না এনে নিজেই ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করেছিলেন এবং সে কথা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন।
ওই রিপোর্ট পেয়েই নড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বিষয়টি প্রথমে জানানো হয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায় বলেন “আমরা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা মেডিক্যাল কাউন্সিল ঠিক করবে।” |