পর্বতই যাচ্ছে মহম্মদের কাছে
চিকিৎসা পরিষেবায় নতুন প্রকল্প হাওড়ায়
ডুলিতে চাপিয়ে স্বাস্থ্যশিবিরে আনা হয়েছে জয়ন্তী মাইতিকে। বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবতী ছেলেবেলা থেকে রোগে ভুগে হাঁটা-চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন। চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাঁকে ওষুধ দিলেন। ফের ডুলি রওনা হল বাড়ির দিকে।
কলকাতা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে হাওড়ার আমতা ২ ব্লকের ভাটোরা গ্রামে মিলল এই চিত্র।
ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা জেলার ‘দ্বীপাঞ্চল’ নামে পরিচিত। মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ দিয়ে ঘেরা এই দুর্গম এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পিপিপি মডেলের এই প্রকল্পটি আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়েছে দক্ষিণ ভাটোরা গ্রামে। প্রায় চারশো পরিবারকে পরিষেবার আওতায় আনা হয়েছে। কেন এই প্রকল্প? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ভাটোরা গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনও চিকিৎসক নেই। আমতা ২ ব্লকের বিএমওএইচ নিজে মাঝে মাঝে এসে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা করলেও তাতে সমস্যা মেটে না। ‘জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন’ প্রকল্পে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এখনও ভবন নির্মাণের কাজই শেষ হয়নি। নিয়োগ হয়নি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীও।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগিণীকে। সুব্রত জানার তোলা ছবি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বানচাল হয়ে যায় এলাকাটি দুর্গম হওয়ার জন্য। কেউ ওই হাসপাতালে চাকরি নিয়ে আসতে চান না। কুলিয়াঘাট থেকে নৌকায় করে খেয়া পার হয়ে কোনওমতে দ্বীপে পা রাখা গেলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য কোনও যানবাহন নেই। ফলে হেঁটে যাতায়াত ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। শুধু তাই নয়, বর্ষার সময় তিন মাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জলের তলায় থাকে। তখন আবার এখান থেকে কোনও পরিষেবাই মেলে না। সেই কারণেই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তা জানান।
স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এই সংস্থা চারশো পরিবারের জন্য সপ্তাহে দু’টি করে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করছে। বাকি দিনগুলিতে করা হয় কাউন্সেলিং। যে এলাকায় চিকিৎসা শিবির বসবে সেখানে আগে থেকে প্রচার করে দেওয়া হচ্ছে। শিবিরে প্রতিটি রোগীর রক্তচাপ পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওজন নেওয়া হচ্ছে। রোগের গুরুত্ব অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা-সহ বিভিন্ন ধরণের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই পরিষেবা গ্রামবাসীরা পাচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও বিনামূল্যে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।
গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য রয়েছে চারটি ডুলি। এগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘দুলকি যান’। রোগীকে ডুলিতে শুইয়ে চার জন কাঁধে করে বয়ে আনেন চিকিৎসাকেন্দ্র পর্যন্ত। ফের তাঁকে বাড়িতে একই ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে ‘নিশ্চয় জল যান’। এটি আসলে নৌকা। তাতে রয়েছে অক্সিজেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। কাউকে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠাতে হলে এই নৌকায় চাপিয়ে রূপনারায়ণের উপর দিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মানকুর ঘাটে। সেখান থেকে সড়ক পথে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামীণ হাসপাতালে। এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, এক সময়ে বাড়িতেই প্রসব হত অনেক প্রসূতির। নিশ্চয় জলযান চালু হওয়ার পরে প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনেই এই সব করা হয়েছে বলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুই কর্ণধার শক্তিপদ দলুই এবং সুমিত কাঁড়া জানান। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, ফার্মাসিস্ট মিলিয়ে মোট ২৯ জন কাজ করছেন প্রকল্পটিতে।
স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে আয়োজিত একটি স্বাস্থ্য-শিবিরে গিয়ে দেখা গেল রোগীদের বিশাল লাইন পড়েছে। গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় যুক্ত হয়েছেন প্রকল্পের সঙ্গে। বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য দীপঙ্কর হাজরাকে দেখা গেল ডুলিতে কাঁধ দিয়ে রোগী বয়ে আনতে। তিনি বললেন, “আসলে এলাকার মানুষ এতটাই বঞ্চিত হয়েছেন যে তাঁদের জন্য কিছু ভাল কাজ হবে, তা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারেন না। তাই এই প্রকল্পটির বিষয়ে প্রথমে তাঁরা সন্দেহ করেছিলেন। এখন প্রত্যেকে এই পরিষেবার সুযোগ নিয়ে চাইছেন।”
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, “আমরা প্রকল্পটি নিয়মিত পর্যালোচনা করছি। ওই এলাকায় স্বাভাবিক উপায়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা চালানো কঠিন। তার ফলেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর পিপিপি মডেলে স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করার অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠায়। অনুমতি মেলার পরেই প্রকল্পটি চালু হয়। ছ’ মাস ধরে এটি চলছে। দফতরের পর্যালোচনায় উপযোগিতাও মিলেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.