কোথাও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ। আবার কোথাও তৃণমূল কর্মীকে চড় মারার অভিযোগ সিপিএমের বিরুদ্ধে। কোথাও আবার পুরানো মামলায় অভিযুক্ত ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহকে গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনের দেরে উত্তাপ ছড়াল। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে যুযুধান দলগুলির মধ্যে অভিযোগের চাপানউতোর ক্রমশ বাড়ছে উত্তরবঙ্গে। রবিবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে জলপাইগুড়ি কোচবিহারে একাধিক মারধর, হুমকির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তকে ধরতে থানায় বিক্ষোভ, অবস্থান হয় কোচবিহারের দিনহাটায়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল ও জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি, দুজনেই দাবি করেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেখানে থানায় স্পষ্ট অভিযোগ জমা পড়ছে, সেখানেই মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি।
মঙ্গলবার দিনহাটায় বিধায়ক উদয়ন গুহ সহ সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে মহিলা সমর্থকদের নিয়ে থানা ও মহকুমাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল কংগ্রেস। বেলা ২টো থেকে থেকে প্রায় দুঘণ্টা মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দলের কর্মী খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা কেউ পার পাবেন না।” পাশাপাশি, সম্প্রতি ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে উদয়নবাবুকে গ্রেফতার করা হলে দিনহাটায় আগুন জ্বলবে বলে যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় তার সমালোচনা করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর পাল্টা হুঁশিয়ারি, “কেউ একটি দেশলাই কাঠি দিয়ে কারও ঘর জ্বালালে সবাইকে লাল ঘরে টেনে নিয়ে যাব। বাম জমানা নেই। যে অশান্তি করে পার পেয়ে যাবেন।” পরে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা বর্মনকে নিয়ে মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “যে কেউ দাবি জানাতেই পারেন। পুলিশ প্ররোচিত না হয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। তা হলেই সব স্পষ্ট হবে।” কোচবিহারের পুলিস সুপার জানান, ওই ঘটনায় ১৩ জনকে ধরা হয়েছে।
ডুয়ার্সের বানারহাটে সিপিএমের এক মহিলাকে মারধর ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। রবিবার বানারহাট থানা এলাকার শালবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরামারি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই মহিলা গত রবিবার সিপিএমে যোগ দেন। তাঁর অভিযোগ, ওই দিন বিকেলে দুরামারি বাজার পেরনোর সময় তাঁকে এক কংগ্রেসকর্মী গালি দেন। প্রতিবাদ করলে তাঁকে কিল-চড় মেরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে ওই কর্মীর হাত থেকে মহিলাকে উদ্ধার করেন। সেই সময়ে তাঁকে গ্রামছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তিনি বানারহাট থানায় এক জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই মহিলা। ধূপগুড়ি ব্লক কংগ্রেস নেতা কেশব রায় অবশ্য দাবি করেন, সাজানো ঘটনা। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না তা দেখছি।”
সোমবার রাতে কুমারগ্রাম ব্লকের খোয়ারডাঙ্গা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব নারারথলি গ্রামে আরএসপি-র ৪ জন স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে হুমকি, শ্ললতাহানি ও প্রাণে মারার ভয় দেখানোর অভিযোগে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলের প্রেমদা দাস। বাড়ি পূর্ব নারারথলি গ্রামে। তিনি এলাকার আরএসপি নেতা বিপ্লব নার্জিনারী সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আরএসপি নেতা বিপ্লববাবুর পাল্টা অভিযোগ, কোন হুমকি কিংবা চাল, নলকূপ বিলির প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস চক্রান্ত করে ওই মহিলাকে দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। পুলিশ ওই চার বাম নেতার বিরুদ্ধে ৪৪৮ ও ৫০৬ ধারায় মামলা শুরু করেছে। আরএসপির কুমারগ্রাম জোনাল সম্পাদক দীপক দাসের অভিযোগ, “তৃণমূল কামাখ্যাগুড়িতে গত সপ্তাহে আমাদের এক সমর্থককে মারধর করেছে। ভল্কাতে আমাদের প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। সুবিচার না পেলে আন্দোলনে নামা হবে।”
এরই পাশাপাশি, তৃণমূল সমর্থক বনবস্তির বাসিন্দাকে প্রকাশ্যে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে এক বনকর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, তিনি সিপিএমের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। রবিবার বিকেলে ডুয়ার্সে মরাঘাট বনাঞ্চলের গোঁসাইহাট বনবস্তিতে ঘটনাটি ঘটে। ওই বনকর্মীকে দীর্ঘক্ষণ ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখান সেখানকার তৃণমূল কর্মীরা। উত্তেজনা থামাতে পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। সোমবার পুলিশের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়। সেখানেই উভয় তরফে দুঃখপ্রকাশ করে বিষয়টি মিটিয়ে নেয়। |