ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বিধায়ক উদয়ন গুহের জামিনের আবেদন নিয়ে বির্তকে জড়ালেন দলেরই দুই নেতা। তৃণমূল কর্মী খুনের মামলায় অভিযুক্ত উদয়ন গুহের জামিনের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার দরজা খোলা রাখার কথা জানান দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সাইরানি। শুক্রবার কোচবিহারে দলের জেলা দফতরে বসে তিনি বলেন, “উদয়নবাবুর জামিনের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া যাবে না এমন সিদ্ধান্ত দল নেয়নি। আমরা আইনকে মর্যাদা দিই।”
এ দিকে, গত বুধবার দিনহাটা মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে আয়োজিত বামপন্থী মহিলা ফ্রন্টের অবস্থান বিক্ষোভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর বলেছিলেন, “উদয়ন গুহের জামিনের জন্য হাইকোর্টে যাওয়া হবে না। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে রাজনৈতিক ভাবেই বিষয়টির মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” উদয়নবাবুকে গ্রেফতার করা নিয়ে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে আন্দোলনের হুমকিও দেন তিনি।
শুক্রবার এবিষয়ে হাফিজ আলম সাইরানিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আইনিভাবে যা করার তা হবে, পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে। অক্ষয়বাবু কী বলেছেন জানি না। ওঁর সঙ্গে ওই বিষয়ে কথা বলব।” দলের দুই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য ঘিরে দলের অন্দরে বির্তক তৈরি হয়েছে।
এ দিন শুক্রবারও নিজের অবস্থানেই অনড় ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অক্ষয় ঠাকুর। তিনি বলেন, “যা বলার ওই সভাতেই বলেছি। ওই বিষয়ে হাইকোর্টে যাওয়া হবে না বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য কে কী বলছেন সেটা তাঁর বিষয়।” তবে যাঁকে নিয়ে এমন বির্তক ফরওয়ার্ড ব্লকের সেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চান নি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলব।”
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, দিনহাটার খট্টিমারিতে গত ১৫ জুন তৃণমূলের বাইক বাহিনীর সঙ্গে বাম কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় রতন বর্মন নামে এক তৃণমূল সমর্থকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের তরফে ওই ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ সহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ রাজনৈতিক কারণে পরিকল্পিত ভাবে উদয়নবাবু সহ বাম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
উদয়ন গুহকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো নিয়ে দলের দুই রাজ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য একসুরে মন্তব্য করলেও, হাইকোর্টে জামিন ইস্যুতে পরস্পর বিরোধী অবস্থান ঘিরে নীচু তলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছে। উদয়নবাবুকে বেকাদায় ফেলতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে দলের কর্মীদের মনে। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী অবশ্য বলেন, “উদয়নবাবুর জামিনের বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে বলেই আমরা শুনেছিলাম। তবে ওই বিষয়ে যা বলার রাজ্য নেতৃত্বই বলবেন।” |