টানা বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে ওঠা পঞ্চনইয়ের জলে সাত সকালে ভাসতে দেখা যায় মহিলার মৃতদেহ। হইচই হওয়ায় পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে নিয়ে যায়। শক্তিগড়ের অনেক রাস্তা দেখা গেল জলে ডুবে গিয়েছে। কোথাও সাদা জামা পড়ে হাতে জুতো মোজা নিয়ে যেতে পিঠে স্কুল ব্যাগ নিয়ে পড়ুয়াদের লাফিয়ে জল পেরোতে গিয়ে ভিজে যেতে দেখা গেল। জল থইথই রাস্তা ঠেলে অটো ধরতে হল নিত্যযাত্রীদের। দেখা গেল সংবাদপত্র বিলি করতে যাওয়া হকারের সাইকেলের চাকা প্রায় অধের্ক ডুবে গিয়েছে। কোনও মতে চলছে সাইকেল। কোনও মতে সংবাদপত্র বিলি করছেন তিনি। কোথাও দেখা গেল, স্কুলে ঢোকার রাস্তায় জল জমে গিয়েছে। ক্লাস ঘরেও জল ঢুকেছে। পড়ুয়ারা ঢুকতে পারছে না।
প্রবল বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ভাবেই জলমগ্ন হয়ে থাকল শিলিগুড়ি। চরম দুর্ভোগের মুখে শিলিগুড়ি। |
জলমগ্ন এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের পথ অবরোধ শিলিগুড়ির জলপাইমোড়ে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
তা নিয়ে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটল। প্রশাসনের তরফে সব প্রাথমিক স্কুল ছুটি দিতে হল। বিক্ষোভের জেরে পুরসভার কাউন্সিলরদের মধ্যে দিনভর চাপানউতোর চলেছে। ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর কাজল চন্দকে দেখা গেল রাস্তা অবরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, এসজেডিএ-র অপরিকল্পনার জন্যই জল জমছে। পক্ষান্তরে, এসজেডিএ-র পক্ষে চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন বোর্ডের একাংশের দায়সারা মনোভাবের জন্যই নাগরিকদের ভোগান্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
পুরসভার অন্দরেও দিনভর বৈঠক হয়েছে। জল্পনা চলেছে পুরকর্মীদের মধ্যেও। কয়েক দফায় বৈঠক হলেও বেলা ৩ টে পর্যন্ত জল বার করার জন্য পাম্পসেট জোগাড় করতে পারেনি পুরসভা। বর্ষার আগেই জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ কাজল চন্দ জানিয়েছিলেন, বর্ষা মোকাবিলার জন্য এ বার তাঁরা পাম্পসেট ভাড়া করে রাখবেন। বাস্তবে কাজের কাজ যে হয়নি বোঝাই গেল।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম সার্বিক বেহাল দশা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ নুরুলবাবুর অভিযোগ, “পুরসভায় ক্ষমতায় থাকা নিয়ে লড়াই চলছে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে। চেয়ারে কে বসবে তা নিয়ে ওই দু’দলের রাতদিনের লড়াইয়ের জেরে ভুগছেন বাসিন্দারা। না হলে এমন ভোগান্তি হবে কেন? মানুষ কিন্তু ছেড়ে কথা বলবেন না।” এর পরেই নুরুলবাবুর সংযোজন, ‘‘বর্ষার সময়ে আমরা কনট্রোল রুম খুলে কোথাও জল জমছে কি না নিজেরাই খবর নিতাম। তা সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতাম। তিন দিন ধরে বৃষ্টি চলছে। এঁরা সবে মঙ্গলবার কনট্রোল রুম খুলেছে। কিন্তু, সেখানে কোনও কাজ হচ্ছে না। পুরসভার সার্বিক ব্যর্থতার জন্য কৈফিয়ত্ চান নাগরিকরা। তলবি সভা ডাকব।”
এ দিন সকাল থেকেই শহরের নানা এলাকায় জল জমে যায়। হাকিমপাড়ার মতো জায়গাতেও বেশ কয়েকটি রাস্তা জলে ডুবে যায়। হায়দরপাড়া বাজারের সামনের রাস্তা টানা বৃষ্টিতে ভেঙেচুরে যাওয়ায় প্রতি পদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে, গান্ধীনগর মোড়ে অবরোধ হয়। পুরসভার সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ কাজল চন্দ সকাল থেকে ব্যস্ত নিজের এলাকায় জল জমা নিয়ে। তিনি নিজেই ঝঙ্কার মোড়ে অবরোধে সামিল হন। তাঁর অভিযোগ, “এসজেডিএ-এর জন্যই এমন হয়েছে।”
ওই এলাকায় জল জমার কারণ খতিয়ে দেখতে যান তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল। তাঁর অভিযোগ, “এলাকার কাউন্সিলর ড্রেনের পাশে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে ১২ ফিটের ড্রেন ৩ ফিট হয়ে গিয়েছে।” যদিও কাজলবাবুর দাবি, তাঁর সঙ্গে আলোচনা না করে ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। পরে জল বার করতে ড্রেনের কিছুটা অংশ ভেঙে ফেলা হয়।
একই অবস্থা শহরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের। এলাকার নেতাজিনগর, ভূপেন্দ্রনগর এলাকায়। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলীপ সিং বলেন, “সেবক রোডে হাইড্রেন পরিষ্কার করা হয়নি বলেই তাড়াতাড়ি জল জমে যাচ্ছে।” ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহিষমারি নদীর ভাসিয়ে দিয়েছে রাস্তা। ওই এলাকায় ৫০০ বালির বস্তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন মেয়র নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাধেঁর জন্য ৩০ লক্ষ টাকার কাজের অর্ডার হয়েছে। অথচ টেন্ডার হয়নি।” শহর সংলগ্ন জলেশ্বরী হাতিয়াডাঙ্গা এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জল জমে কাওয়াখালি এলাকাতেও।
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত শিলিগুড়িতে নেই। দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি মেয়র সবিতা অগ্রবাল। যিনি সোমবার জানিয়েছিলেন, পুরসভায় ঢোকার মুখে যে জল জমে তা তাঁর নজরে পড়েনি। যা নিয়ে পুরসভায় ক্ষোভ দেখা দেয়। এ দিন অবশ্য পুরসভার গেটের সামনে ড্রেন কেটে জল বার করে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সবিতা দেবী বলেন, “২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ফোন করে জানানো যাবে সমস্যা।” পুরসভার কন্ট্রোল রুমের নম্বর ২৪৩৫৭৪৭। |