যাঁরা ফেরেননি ৬
যদি বেজে ওঠে মোবাইল, পাপা বলবেন ভাল আছি
মোবাইল ফোনটা সেই যে জুনের ১৬ তারিখে বন্ধ হয়েছে, আর কোনও সাড়াশব্দ নেই।
২০টা দিন কেটে গিয়েছে। এখনও খোঁজ নেই গঢ়বালে হারিয়ে যাওয়া শিলিগুড়ির সেবক রোডের দম্পতি মোহন জিন্দল ও মীনাদেবীর। কলকাতার যে পসারি দম্পতিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কেদার-বদ্রী গিয়েছিলেন, ফেরেননি তাঁরাও।
বাড়ির সঙ্গে মোহনবাবুদের শেষ যোগাযোগ হয়েছিল ওই ১৬ জুনই, কেদারনাথে পুজো দেওয়ার পর। জানিয়েছিলেন, খুব ভাল পুজো দেওয়া হয়েছে। এখন হোটেলে ফিরেছেন।
আর কোনও যোগাযোগ নেই। তার পর থেকে আর এক বারের জন্যও ফোনের ও পাশে পাপা-র গলার আওয়াজ শুনতে পাননি ছেলে-মেয়েরা।
মোহনবাবুর ছেলে মণীশ নানা মহলে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতার এক কাকা-কাকিমাও গঢ়বাল গিয়েছিলেন। তাদেরও কোনও খোঁজ নেই।” চার চারটে জলজ্যান্ত মানুষ কী কর্পূরের মতো উবে গেলেন? প্রশ্ন মেয়ে মণিতারও। এলাকার কাউন্সিলর নান্টু পাল তাঁদের পারিবারিক বন্ধু। নান্টুবাবু বলেন, “আমিও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এত তাড়াতাড়ি হাল ছাড়লে চলবে না।” গত মাসের ১৩ তারিখে শিলিগুড়ি থেকে রওনা হন মোহনবাবু ও মীনাদেবী। প্রথমে কলকাতায় যান তাঁরা। বালিগঞ্জে এক আত্মীয় অনিল পসারি এবং তাঁর স্ত্রী শান্তিদেবীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন গঢ়বালে। হরিদ্বার-রুদ্রপ্রয়াগ ঘুরে ১৬ জুনই কেদারনাথ পৌঁছেছিলেন তাঁরা।
মোহন জিন্দল ও মীনাদেবী
বাবা-মায়েদের খোঁজে উত্তরাখণ্ডেও গিয়েছিলেন মণীশ ও তার দিল্লিবাসী ভাই মুকেশ। কয়েক দিন ধরে সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খুঁজেছেন। কেদারনাথের সেই হোটেলের এক কর্মীর কাছ থেকেই জানতে পারেন, পুজো দিয়ে হোটেলে ফিরে মোহনবাবুরা জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান। গৌরীকুণ্ডের ৫ কিলোমিটার আগে শোনপ্রয়াগের দিকে গিয়েছিলেন তাঁরা। খুঁজতে খুঁজতে শোনপ্রয়াগ পর্যন্ত গিয়েছিলেন মণীশ ও মুকেশ। সেখানকার সরকারি শিবিরেও খোঁজখবর করেন। কোনও খবর মেলেনি। মণীশবাবু বলেন,“আমরা উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণার সঙ্গেও দেখা করি। দেখা হয় রাজ্যের দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও রচপাল সিংহের সঙ্গেও। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”
মণীশবাবুর স্ত্রী রঞ্জিতাদেবীও শ্বশুর-শাশুড়ির খোঁজ না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন। শ্বশুর মশাইয়ের খবর নেই, স্বামী তাঁদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।এই পরিস্থিতিতে তাঁকেই ব্যবসার কাজ সামলাতে হচ্ছে। রঞ্জিতাদেবী বলেন, “শ্বশুর থাকলে আমাকে এসব করতে হত না। তিনি করতে দিতেনও না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি ফিরে আসেন।” বলতে বলতে গলা কেঁপে যায় তাঁর। মোহনবাবুর ভাইপো প্রদীপ অগ্রবাল বলেন, “আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কিন্তু কোনও সূত্র পাচ্ছি না। তাঁরা কেমন আছেন, কোথায় আছেন, কিছুই জানি না।”
বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনও। তিনি বলেন,“আমাদের কাছে এখনও মোহনবাবুদের কোনও খবর নেই। উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
মোবাইল ফোনটির দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন গোটা পরিবার। বেজে উঠলেই সকলে ছুটে যাচ্ছেন। এই হয়তো ও পার থেকে পাপা-র গলা ভেসে উঠবে। বলবেন আমরা সকলে ঠিকই আছি। ফিরছি শীঘ্রই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.