রেলে চাকরির তালিকা বাতিল করা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশের চাকরির প্যানেল রেল বাতিল করেছে বলে গত কাল অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ নিয়ে আন্দোলনে নামারও হুমকি দেন। এর পরেই আজ দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে অধীর বলেন, “প্যানেল বাতিলের কোনও নির্দেশ জারি করার প্রশ্নই ওঠে না। এ ভাবে চাকরিপ্রার্থীদের প্যানেল বাতিল করা যায় না। যদি তৃণমূল প্রমাণ করতে পারে ওই ধরনের কোনও নির্দেশ রেল জারি করেছে, তা হলে আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।” একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক মুখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই ওই ধরনের কথা রটাচ্ছে তৃণমূল। অধীর বলেন, “ফুরফুরা শরিফ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। আমার জেলা মুর্শিদাবাদও তাই। তাই ফুরফুরার উদাহরণ দিয়ে মদন মিত্র বার্তা দিতে চাইছেন যে, কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের কথা ভাবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ বোকা নন। ফুরফুরার যে বাসিন্দারা জমি দিয়েছেন বা ভবিষ্যতে দেবেন, তাঁরা সকলেই রেলে চাকরি পাবেন।”
অধীরবাবু এ দিন জানান, ‘জমির পরিবর্তে চাকরি দেওয়ার’ নীতি পরিবর্তন করেনি রেল। রাজ্যের বিশেষ রেল প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে জমি দিলে ক্ষতিগ্রস্তরা চাকরি পাবেন। তাঁর দাবি, “জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব থাকে রাজ্য সরকারের উপরে। মমতার সরকার যদি রেলের প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করে দেয়, তা হলে জমিদাতাদের দ্রুত চাকরি দিতে সক্ষম হবে রেল মন্ত্রক। সামগ্রিক ভাবে গতি পাবে রেলের প্রকল্পগুলি। আর লাভ হবে রাজ্যের।”
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ‘জমি দিলে চাকরি’ এই নীতি নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তী রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ওই নীতি মেনে রাজ্যের বেশ কিছু জমিদাতার হাতে নিয়োগপত্রও তুলে দেন। কিন্তু সম্প্রতি তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ওই নীতি মানা হচ্ছে না। ডানকুনি থেকে ফুরফুরা শরিফ পর্যন্ত লাইন পাততে ২২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে রেলকে। তারা জানিয়েছে, ওই পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করলে প্রায় সাড়ে চার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওই প্রকল্পে জমির বিনিময়ে চাকরি চেয়ে ৪৭৩টি আবেদনের মধ্যে ইতিমধ্যেই নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন ১১৫ জন। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণে সমস্যার জন্য ওই প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলছে। তারই মধ্যে তৃণমূল নেতৃত্ব কাল অভিযোগ তোলেন, ওই প্রকল্পে জমি দেওয়া সত্ত্বেও যাঁরা এখনও চাকরি পাননি, তাঁরা ভবিষ্যতে আর চাকরি পাবেন না। কেন না যাঁদের নাম চাকরি পাওয়ার তালিকায় ছিল, রেল সেই প্যানেল বাতিল করেছে। ওই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আন্দোলনের হুমকি দেন মদন মিত্র। এর পরেই আজ মুখ খোলেন অধীরবাবু।
আগামিকাল দমদম থেকে নোয়াপাড়া মেট্রো পরিষেবার উদ্বোধন করতে কলকাতা যাচ্ছেন অধীর। দমদম থেকে নোয়াপাড়া হয়ে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার মেট্রোর একাংশের কাজ অবৈধ বসবাসকারীদের জন্য দীর্ঘ দিন আটকে রয়েছে। রেলের অভিযোগ, বহু বার রাজ্যকে এ নিয়ে চিঠি দেওয়া হলেও রাজ্য ওই জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করছে না। ফলে আটকে রয়েছে কাজ। এ দিন অধীর বলেন, “ভোটের আগে সস্তার রাজনীতি ছেড়ে রাজ্যের সত্যিকারের উন্নয়নে কীসে হয়, তা ভাবুক মমতার সরকার। যেখানে যেখানে জমি অধিগ্রহণের কাজে সমস্যা রয়েছে, সেখানে রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করে দিক। এতে প্রকল্পের কাজও এগোবে। ন্যায্য ব্যক্তি চাকরিও পাবেন। ”
|