ভোট-জটে বিধানসভায় জটিলতা, প্রশ্নের মুখে ব্যয়বরাদ্দ
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে পঞ্চায়েত ভোট পিছোতে পিছোতে এসে পড়েছে জুলাইয়ে। আর এই ভোট-জটিলতায় নতুন এক সঙ্কটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্য। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে চলতি আর্থিক বছরের বাকি অংশের জন্য ব্যয়বরাদ্দ পাশ করাতে না-পারলে সরকারি খরচের প্রক্রিয়াই আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাতে দেখা দেবে সাংবিধানিক সঙ্কট। এখন পাঁচ দফার পঞ্চায়েত ভোট এবং গণনা-পর্বের মধ্যে কবে অধিবেশন ডাকা হবে, তা নিয়ে বিস্তর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের বছর বলেই গত মার্চে পূর্ণ বাজেটের বদলে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পাশ করা হয়েছিল। যার মেয়াদ ফুরোচ্ছে ৩১ জুলাই। ওই তারিখের মধ্যেই বাকি বছরের ব্যয়বরাদ্দ বিধানসভায় অনুমোদন করাতে হবে। তার উপরে আছে দফতর ভিত্তিক ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে নামমাত্র অধিবেশন ডেকে ব্যয়বরাদ্দ পাশ করিয়ে নিতে হবে। বড়-ছোট নির্বিশেষে সব দফতরের ব্যয়বরাদ্দের আলোচনা চাপবে গিলোটিনে! বছর বছর এই ভাবে বহু দফতরের বাজেট আলোচনা ছাড়াই পাশ করিয়ে নেওয়ার রেওয়াজ নিয়ে বিরোধীদের বটেই শাসক শিবিরের একাংশেও এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পঞ্চম ও শেষ দফার পঞ্চায়েত ভোট শেষ হবে ২৫ তারিখ। গণনা ২৯ তারিখ। পঞ্চায়েতের ত্রিস্তর এবং ব্যালটে ভোট মাথায় রাখলে যা অবধারিত ভাবে গড়াবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত। পরিষদীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক ভাবে চাইছেন, শেষ দফার ভোটগ্রহণ ও গণনার মাঝে আগামী ২৭ জুলাই, শনিবার এক দিনের অধিবেশন ডেকে সার্বিক ভাবে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট করিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু পরিষদীয় মহলে প্রশ্ন উঠেছে, অধিবেশন ডাকলে প্রথম দিন শোকপ্রস্তাব এনে মুলতবি করতে হবে। পরে ব্যয়বরাদ্দ পাশের জন্য ৩০ তারিখ ধার্য করা হলে জেলায় জেলায় গণনা ও ফলপ্রকাশের প্রক্রিয়া ছেড়ে বিধায়কেরা আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। ভোটের মধ্যে অধিবেশন ডাকা যাবে না আবার ৩১ তারিখ পেরিয়ে গেলেও বিপদ উভয় সঙ্কটে পড়েছে বিধানসভা!
জটিলতার কথা মেনে নিয়েই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বার সংক্ষিপ্ত অধিবেশনের (৩০ এপ্রিল অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে বিল পাশের পর) পরে বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখা (পরিভাষায় ‘প্রোরগ’) হয়েছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতবি করা হয়নি। নিয়মানুযায়ী, এই অবস্থায় অধিবেশন ডাকার দায়িত্ব স্পিকারের নয়। মন্ত্রিসভার সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যপাল অধিবেশন ডাকার নির্দেশ জারি করবেন। সেইমতো আমি বিধানসভার সদস্যদের জানাব।” বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার আগে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করতে চাননি। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় মুখ্যমন্ত্রী যা প্রস্তাব দেবেন, তা-ই চূড়ান্ত হবে বলে শাসক দল সূত্রের বক্তব্য।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে টানাপোড়েনে বিধানসভাকে যে ভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের পরিষদীয় দলেই কিছু প্রশ্ন এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পরিষদীয় দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক এক্তিয়ার নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। রাজ্য সরকার আবার নিজেদের এক্তিয়ার নিয়ে সরব। তারা রমজানে ভোট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু বিধানসভারও তো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে! সেই দিকটা উপেক্ষিত হয়ে থাকল!”
জট কাটাতে বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের প্রস্তাব, জুলাইয়ে এক দিনের অধিবেশন ডেকে দু’মাসের ব্যয়বরাদ্দ পাশ করিয়ে নেওয়া হোক। তার পরে ভোট-প্রক্রিয়া মিটে গেলে দফাওয়াড়ি অধিবেশন ডেকে দফতর ভিত্তিক আলোচনা হোক। তাতে গিলোটিনের প্রশ্ন এড়ানো সম্ভব। প্রাক্তন স্পিকারের সূত্র আইনত গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিয়েও পরিষদীয় একটি সূত্র অবশ্য বলছে, “মন্ত্রিসভা যা বলবে, তা-ই করতে হবে!” অর্থাৎ সেই মুখ্যমন্ত্রীরই মুখাপেক্ষী হয়ে আছে বিধানসভা!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.