রেল মন্ত্রক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকাকালীন রেললাইন তৈরির জন্য জমি দেওয়ার বদলে চাকরি মিলবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই আশ্বাস অনুযায়ী কিছু লোকের চাকরি হওয়ার পরে রেল মন্ত্রক এখন বলছে, তালিকাভুক্ত অন্যদের আর চাকরি দেওয়া যাবে না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। রীতিমতো তরজা জমে উঠেছে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী এবং রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের মধ্যে। এ ভাবে চাকরির তালিকা খারিজ করে দেওয়ায় রেলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারির সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মদনবাবু। জবাবে সোজা আদালত দেখিয়ে দিয়েছেন অধীরবাবু।
নন্দীগ্রাম থেকে ফুরফুরা শরিফ পর্যন্ত রেললাইন তৈরির জন্য জমি নিয়েছিল রেল মন্ত্রক। তখনকার রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, জমিদাতাদের পরিবার-পিছু এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে। ওই প্রতিশ্রুতি অনুসারে ৭৫০ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকার ৩২৫ জন চাকরিও পেয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি রেল মন্ত্রক একটি নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ওই প্যানেলে থাকা বাকি ৪২৫ জনকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়।
পরিবহণমন্ত্রী এবং ভারতীয় রেলের জাতীয় ফেডারেশনের জোনাল সম্পাদক মদনবাবু সোমবার মহাকরণে বলেন, “নন্দীগ্রাম এবং ফুরফুরা শরিফের মানুষ উন্নয়নের জন্য জমি দিয়েছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, রাজ্যের উন্নয়ন হবে। রেললাইন গড়া তো দূরের কথা, এখন চাকরিও দেবে না বলছে রেল।” তিনি জানান, রেল মন্ত্রক চাকরি না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত না-বদলালে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু হবে। প্রয়োজনে আইনের সাহায্যও নেওয়া হবে। নাম না-করেই বর্তমান রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুর উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়েছেন মদনবাবু। এ দিন তিনি বলেন, “যিনি চাকরি বাতিলের এই পরিকল্পনা করেছেন, বহরমপুরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই তিনি টের পাবেন।”
২০০৮ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্প ঘোষণা করেন মমতা। তার পরেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। প্যানেল বাতিল প্রসঙ্গে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবু বলেন, “তাঁর (মমতার) আমলে ঘোষিত অধিকাংশই ধাপ্পাবাজির প্রকল্প। পরিকল্পনা না-করেই প্রকল্প ঘোষণা করে সস্তার রাজনীতি করা হয়েছে। তার দায় রেল মন্ত্রক বইতে যাবে কেন! চাকির না-দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি অন্যায় হয়ে থাকে, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মামলা করুক।” অধীরবাবুর পাল্টা যুক্তি, ওরা তো অনেক দিন রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিল। চাকরি দিয়ে যায়নি কেন! তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ ভাবে কোনও প্যানেল বাতিল করা যায় কি না জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, ওই প্রকল্পের কাজ এগোয়নি। নন্দীগ্রাম-ফুরফুরা শরিফ রেললাইন তৈরির কাজ রেলমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণ যতটুকু হয়েছে, সেই অনুসারেই চাকরি হয়েছে। বাকি জমি এখনও পাওয়া যায়নি। |