বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষার ফল বেরোল না। শুধু তা-ই নয়, কবে যে ওই নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে, তা নিয়ে এখনও ঘোর অনিশ্চয়তা! কমিশন-কর্তৃপক্ষ জানাতেই পারছেন না, প্রায় এক লক্ষ ৮০ হাজার প্রার্থীর ফল কোন সময়ে বার করা যাবে। পরীক্ষা হয়েছিল গত বছর ২৯ জুলাই।
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক-পদের জন্য পরীক্ষায় বসেছিলেন সাত লক্ষ প্রার্থী। পরীক্ষার দ্বিতীয় পত্র বা টেট-এর ফল বেরিয়েছে গত ১ ডিসেম্বর। তাতে কৃতকার্য হয়েছেন প্রায় এক লক্ষ ৮০ হাজার প্রার্থী। এঁদের সংশ্লিষ্ট বিষয় তথা প্রথম পত্রের ফলপ্রকাশ নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। আধখানা ফল মিলেছে। বাকি আধখানা আটকে থাকায় পূর্ণ ফল অর্থাৎ নিয়োগ অধরাই থেকে গিয়েছে। তাতে প্রার্থীরা উদ্বিগ্ন তো বটেই। যে-সব স্কুলে পদ খালি, শিক্ষক না-পাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদেরও।
যে ৫০ হাজার পদের জন্য পরীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে ৩৯ হাজার ৫০০টি নতুন। অর্থাৎ ১০ হাজারেরও বেশি পদ এক বছর আগেই খালি হয়েছে। আরও অন্তত ১৫ হাজার শিক্ষক গত এক বছরে অবসর নিয়েছেন বলে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। নতুন পদ বাদ দিলেও এই প্রায় ২৫ হাজার পদে আপাতত শিক্ষক নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন।
এসএসসি-র পরীক্ষা ঘিরে গোড়া থেকেই বিতর্ক। জুলাইয়ে পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র নিয়ে গোলমালের জেরে সেপ্টেম্বরে ফের পরীক্ষা নিতে হয় পাঁচটি কেন্দ্রে। তার পরে টেটের মডেল উত্তর, বিএড প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার বিরোধিতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে মামলা হয় এই পরীক্ষাকে ঘিরে। কমিশন সূত্রের খবর, ৫২টি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ১৫টির নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগের বিরোধিতা করে যে-মামলা চলছে, তা নিয়ে কমিশনের কর্তারা উদ্বিগ্ন। ওই মামলার রায়ের উপরে ফলপ্রকাশ অনেকটা নির্ভর করছে বলে তাঁদের অভিমত। কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল অবশ্য পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশ নিয়ে কথাই বলতে চাননি।
২০১৪-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার ছাড়পত্র দিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)। সেই জন্যই গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বিএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়নি। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা শূন্য পদের থেকে কম। প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগ করতেই হবে। এনসিটিই-র ছাড়পত্র আছে বলেই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হয়নি।”
এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রকাশ নিয়ে ধোঁয়াশায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন প্রার্থীরা। যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁরা তো বটেই। কর্মরত যে-সব শিক্ষক বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পেতে ফের এসএসসি-র পরীক্ষায় বসেছিলেন, তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না, কী হবে। এক প্রার্থীর কথায়, “ফল বেরোলেই তো হবে না। তার পরে ইন্টারভিউ। তাতে সফল হলে তবেই কাউন্সেলিং করে স্কুল বাছাই হবে। এত সব প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে?”
প্রাথমিক স্কুলের জন্য শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে ৩১ মার্চ। ফলপ্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই বলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দাবি। ৩৫ হাজার পদের জন্য ২৪ লক্ষ পরীক্ষা দিয়েছেন। পুজোর আগেই ফল বার হবে বলে পর্ষদ-কর্তাদের আশা। যাঁরা ৬০% বা তার বেশি পাবেন, সকলের নামই মেধা-তালিকায় থাকবে। তবে ৩১ মার্চ অনিবার্য কারণে যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের ফের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে যে-আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে পর্ষদ সূত্রের খবর।
|