এক প্রান্তে অতিবৃষ্টিতে বন্যার ভ্রুকুটি। অন্য প্রান্তে ভরা আষাঢ়েও জ্যৈষ্ঠের দহন। সেই সঙ্গে তুঙ্গে ওঠা আর্দ্রতায় চরম অস্বস্তি। রাজ্যের দু’প্রান্তে এখন এই দুই বিপরীত আবহাওয়া। এর মূলে আছে মৌসুমি অক্ষরেখার ওঠা-নামা।
কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে দু’দিন ধরে। আগামী দু’দিন বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বন্যার আশঙ্কায় উত্তরবঙ্গের ওই দুই জেলাকে সতর্ক থাকতে বলে দিয়েছে তারা। তবে শুধু কোচবিহার-জলপাইগুড়ি নয়, বৃষ্টিতে বিপন্ন পাহাড়ও। দার্জিলিং আর সিকিমের পাহাড়ে ইতিমধ্যেই ধস নামতে শুরু করেছে।
দক্ষিণবঙ্গে উল্টো ছবি। ভরা বর্ষায় আকাশ জুড়ে শরতের মেঘ। আর প্রচণ্ড দহন। সোমবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেক তিন ডিগ্রি বেশি। সঙ্গে আর্দ্রতার দাপট। এ দিন মহানগরে সর্বাধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ।
একই সময়ে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণে এই বিপরীত ছবি কেন?
এই বৈপরীত্যের জন্য মৌসুমি অক্ষরেখার ওঠা-নামাকেই দায়ী করছেন আবহবিদেরা। তাঁদের আশা, উত্তরবঙ্গ ভাসিয়ে মৌসুমি অক্ষরেখা চলতি সপ্তাহের শেষাশেষি দক্ষিণবঙ্গে নেমে আসবে। বৃষ্টি হবে এখানেও।
চলতি মরসুমের গোড়া থেকেই বর্ষার প্রকৃতি গত কয়েক বছরের তুলনায় কিছুটা আলাদা। গত কয়েক বছর ঠিক সময়ে বর্ষা ঢুকলেও জুনে এ রাজ্যে তেমন বৃষ্টিই হয়নি। এ বার কিন্তু জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই পরপর নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। জুলাইয়ের শুরু থেকেই উত্তরবঙ্গে চলছে ভারী বর্ষণ। দিল্লির মৌসম ভবনের হিসেব, রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জলপাইগুড়িতে সাত এবং কোচবিহারে ছয় সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বর্ষণ হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও।
দক্ষিণবঙ্গে তেমন বৃষ্টি নেই কেন?
আবহ দফতরের বক্তব্য, জুন, জুলাই, অগস্ট, সেপ্টেম্বর বর্ষাকাল হলেও এই চার মাসের প্রতিদিনই লাগাতার বৃষ্টি হয় না। বৃষ্টি হয় কয়েকটি পর্যায়ে। মৌসুমি বায়ু উপরে-নীচে ওঠা-নামা করতে থাকে। কখনও তা থাকে উত্তরবঙ্গে, কখনও নামে দক্ষিণে। ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ অক্ষরেখা, নিম্নচাপ এ-সবই নিয়ন্ত্রণ করে মৌসুমি বায়ুর অবস্থানকে। মৌসুমি অক্ষরেখা দূরে চলে যাওয়ায় দাপুটে দহন চলছে দক্ষিণবঙ্গে। ওই অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গ থেকে না-নামা পর্যন্ত দক্ষিণে তাপমাত্রা বাড়বে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকায় বাড়বে আর্দ্রতাও। ফলে অস্বস্তি চলবে। জলীয় বাষ্প সরাসরি রওনা দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের দিকে। মাঝপথে অনুকূল পরিস্থিতি পেলে খণ্ডমেঘ থেকে বৃষ্টি নামছে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও। মৌসুমি অক্ষরেখা নেমে না-আসা পর্যন্ত এই ধরনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে দক্ষিণবঙ্গকে। |