বারবার পরিকল্পনা করা এবং তার থেকে পিছিয়ে আসা। বাসের ভাড়া না বাড়িয়েও কী ভাবে পরিবহণের ভর্তুকি কমানো যায়, তার পথ খুঁজতে গত দেড় বছরে যে ক’টি পরিকল্পনা হয়েছিল তার প্রায় সবক’টি কার্যকর করা নিয়েই প্রশ্ন ওঠায় সেগুলি ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সরকারি পরিকল্পনার শেষ সংযোজন, নিগমের জমিতে ডিপো রেখে তার উপরে বহুতল তৈরি করে বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া। অনেকের মতে, আয় বাড়াতে এ যাবৎ কালে যত পরিকল্পনা হয়েছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও সরকারের পক্ষে লাভজনক হতে পারে।
কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন শহরে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একাধিক বাস ডিপো রয়েছে, যেখানে জমির একটি বড় অংশ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এই জমিগুলিকে বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগিয়ে কী করে আয় বাড়ানো যেতে পারে, তার ভাবনা শুরু হয় বাম আমলেই। বস্তুত, আগের সরকার দু’একটি ডিপোর ফাঁকা জমি বিক্রিও করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালে জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ছ’মাসের মধ্যে নিগমগুলিকে লাভজনক করে তোলা হবে। তার সেই ভাবনা এখনও পরিকল্পনার খোলস ছেড়ে বেরোতে পারেনি!
কেন?
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানান, পরিবহণ নিগমগুলির জমি বিক্রি করার কাজ শুরু করতে গিয়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে সরকার। বেশ কিছু জমি রয়েছে, যেগুলির মালিকানা সরকারের হাতেই নেই। আবার অনেক জমি রয়েছে, যেগুলির মালিকানা সরকারের কাছে থাকলেও তার নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মালিকানা ও কাগজপত্র ঠিকঠাক রয়েছে এমন ১৫-২০টি ডিপোর জমি বিক্রি করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, এর মধ্যে কয়েকটি ডিপো তুলে দিয়ে ওই জমি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হবে। অথবা ডিপোর এক দিকে বাস রেখে বাকি অংশ বিক্রি করে দেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ভবিষ্যতে বাসের সংখ্যা বাড়লে তা থাকার কী ব্যবস্থা হবে? মূলত এই প্রশ্নেই থমকে যায় সরকারের ভাবনা।
এখন ডিপো রেখে বহুতলের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। পরিবহণের এক কর্তার কথায়, “এতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।” ওই কর্তা জানান, নিগমের জমিতে বহুতল তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে কলকাতার কয়েকটি ডিপোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ডিপোগুলিতে এখনকার মতো বাস রাখার ব্যবস্থা থাকবে। তার উপরেই তৈরি হবে বহুতল। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য লিজের ভিত্তিতে ওই বহুতল বিক্রি করা হবে। এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, “চিহ্নিত ডিপোগুলি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় তার জমির মূল্যও অন্য ডিপোর থেকে বেশি। সেখানে বহুতল করে বিক্রি করলে অনেক টাকা আয় হবে সরকারের।” প্রাথমিক ভাবে বহুতলের জন্য কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বেলঘড়িয়া, গড়িয়াহাট, ঠাকুরপুকুর-সহ ছ’সাতটি ডিপো চিহ্নিত করা হয়েছে।
নতুন পরিকল্পনা কার্যকর করতে পদক্ষেপও করছে সরকার। মহাকরণের খবর, পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন পরিবহণ-কর্তারা। এই আলোচনা শেষ হলে একটি রিপোর্ট দেবে ওই সংস্থা। রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রাথমিক ভাবে কেপিএমজি-কে এই বিষয়ে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। ওই সংস্থা রিপোর্ট দিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কিন্তু নীচে বাস ডিপো থাকলে উপরে বেসরকারি বহুতল প্রকল্প কতটা সফল হবে?
পরিবহণ দফতরের কর্তারা বলছেন, নীচে ডিপো থাকলে বহুতলে সমস্যা হতে পারে, এই ভাবনা মাথায় রেখে গোটা বিষয়টি পেশাদারিত্বের মোড়কে করার কথা ভাবা হয়েছে। কেপিএমজি-কে সেই ভাবেই রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। ওই সংস্থা রিপোর্ট তৈরির আগে ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন এবং মার্কেটিং সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে নেবে। |